জাবির ট্র্যাজেডির শহীদ পরিবারের কান্না ও প্রতিবাদ
‘আমার ৯ বছরের শিশু কীভাবে দুর্বৃত্ত হলো’
জুলাই অভ্যুত্থানে যশোরের ‘জাবির ট্র্যাজেডি’-তে নিহত ২৪ জনের শহীদের স্বীকৃতি চেয়ে মানববন্ধন করেছেন নিহতদের পরিবার।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন হয়।
বিজ্ঞাপন
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শহীদদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তারা ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, তাদের সন্তানরা দেশের জন্য রাজপথে আন্দোলন করেছিল। সরকার পতনের পর ৫ই আগস্ট বিজয় মিছিলে তারা অংশ নেয়। সেই মিছিল থেকেই হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুন লাগার ঘটনায় মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে তারা নিহত হন।
বিজ্ঞাপন
তারা দাবি করেন, কেউ লুটপাট বা সন্ত্রাসে জড়িত ছিল না। পুলিশ ২৪ জন নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেছে। তাদের মধ্যে একজন বিদেশি, ১৩ জন শিক্ষার্থী ও অন্য পেশার মানুষ ছিলেন। শহীদদের লুটপাটকারী ও সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা সন্তানের জন্য শহীদ স্বীকৃতি দাবি করেন।
নিহত আবরার নীলের মা জেসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার নয় বছরের বাচ্চা কীভাবে দুর্বৃত্ত হলো? সে তো মানুষকে সাহায্য করতে গিয়েছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে পুড়ে মারা গেছে। ও ছিল নিষ্পাপ শিশু। তাকে লুটকারীর কলঙ্ক দেবেন না। এনিয়ে রাজনীতি করবেন না। এই প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শহীদদের স্মৃতি কলঙ্কিত করতে এবং আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, জাবির ট্র্যাজেডিতে একজন বিদেশি নাগরিকও শহীদ হয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্র তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। এতে আন্তর্জাতিকভাবে আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরার সুযোগ হারিয়েছে দেশ। জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধারা এই ট্র্যাজেডিতে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের স্বীকৃতি নিয়ে তালবাহানা দুঃখজনক।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শহীদ ইউসুফ আলীর মা শাহীনা খাতুন, শহীদ সোহানুর রহমান সোহানের বাবা আনোয়ার হোসেন লাল্টু। এসময় নিহত ও আহতদের পরিবার এবং জুলাই বিপ্লবের অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে শহীদ পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘প্রথম আলো’ ও স্থানীয় দৈনিক ‘গ্রামের কাগজ’ পত্রিকার কপি আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, জাবির ট্র্যাজেডির ঘটনায় ওই হোটেলের মালিক শাহীন চাকলাদারের ভাই তৌহিদ চাকলাদার বাদী হয়ে ২০০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলা এখনও তদন্তাধীন। শহীদ পরিবার ও আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এই মামলাটি উল্টো জুলাই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার হতে পারে।
রেজওয়ান বাপ্পী/এআরবি