সংবাদ প্রকাশের জেরে বেসরকারি টেলিভিশন মাই টিভির রংপুর প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসানকে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পীরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।

ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস পর দায়ের করা এ মামলায় পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন—পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিবুল ইসলাম, হাসান আলী, মো. রায়হান ও প্রশিক্ষক আব্দুল মান্নান।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান বলেন, পীরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটা সংবাদ করেছি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হত্যার উদ্দেশে এসব করেছে। আমি আশা করছি, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত আছে প্রশাসন তাদেরকে আইনের আওতায় আনবেন।

রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করতে নানা সময়ে সাংবাদিকদের ভয়ভীতিসহ হত্যার হুমকি দেয় দুষ্কৃতকারীরা এটা স্বাধীন সাংবাদিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজ রংপুরের সদস্য সচিব ও সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল বলেন, সারা দেশে যেভাবে সাংবাদিকদের উপরে হামলা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে এই পেশায় ভালো মানুষ আর আসতে চাইবে না। যারা সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেনো ব্যবস্থা নেন। অপরাধীরা যেনো কোনোভাবেই ছাড় না পায়। 

পীরগঞ্জ থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে কুরিয়ার সার্ভিসে সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের নামে দুটি পার্সেল আসে। এতে দুটি কাফনের কাপড়ের সঙ্গে দুটি প্রিন্ট করা চিঠি ছিল। চিঠিতে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। মাই টিভিতে কয়েকটি ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিক। কাফনের কাপড় ও চিঠিগুলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে পাঠানো হয়। প্রেরকের ঠিকানায় পীরগঞ্জের আরেক সাংবাদিক মিলনের নাম ও ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়।

চিঠির একটি খামে লেখা ছিল, 'অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তোর কারণে। এবার আমার খেলা শুরু। ঠিকমতো পছন্দের খাবার খেয়ে নেরে হারামখোর।' অপর খামে লেখা, 'ভাটা মালিকের কাজই মূলত সবসময় আগুন নিয়ে খেলা করা, তোর সময় শেষ, রংপুর মিঠাপুকুর বা সুবিধামতো জায়গা পেলেই খেল খতম। অপেক্ষার প্রহর গণনা শুরু।'

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে