নানা সমস্যা ও অপ্রতুলতার কারণে ফেনীতে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিশেষ করে, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় জেলার হৃদরোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ফলে সামান্য অসুস্থতা নিয়েও রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ঢাকা বা চট্টগ্রামে, যেখানে পথেই অনেকের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

তেমনি একজন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা ওহিদুর রহমান সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শহরের আল বারাকা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করে চিকিৎসকরা। তবে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।

সাম্প্রতিক একইভাবে জেলায় হৃদরোগ আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরা। তবে এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যমতে, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, উন্নত প্রযুক্তি এবং সমৃদ্ধ পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় ফেনীতে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যথাযথ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে জেলার হৃদরোগ চিকিৎসা সমৃদ্ধ হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

হৃদরোগ আক্রান্ত শাহানুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী বলেন, দুই মাস আগে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে দেশে আসি। তারপর ফেনীতে দুবার চিকিৎসা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কিছু পরীক্ষার জন্য ঢাকায় যেতে হয়। নিজ শহরে যদি এ সুবিধাগুলো থাকত আমার মতো করে অনেকেই এমন ভোগান্তি থেকে বেঁচে যেত।

রাজীব হায়দার নামে শহরের এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, কয়েক বছর আগে আমার মা হৃদরোগ আক্রান্ত হলে প্রথম পর্যায়ে ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে যাই। ওই মুহূর্তে চিকিৎসা না পেলে হয়ত মাকে তখন বাঁচানো যেতো না। পরবর্তী শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে সেখানের চিকিৎসকরা প্রাথমিক পর্যায়ে ফেনীর এ চিকিৎসার প্রশংসা করেন।

হৃদরোগ চিকিৎসা প্রসঙ্গে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শোয়েব ইমতিয়াজ নিলয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগ উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। উচ্চতর প্রযুক্তির অভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম স্থানান্তর করা হয়। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে হৃদরোগ চিকিৎসায় দুইজন কনসালটেন্ট ও একজন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ জন এবং ১৫-২০ জন ভর্তি রোগী চিকিৎসা নেন। এনজিওগ্রামের মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা গেলে জনপদের হাজারো মানুষ উপকৃত হবে।

জেলায় হৃদরোগ চিকিৎসায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেবা দিচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসায় উন্নত প্যাথলজিক্যাল সেবা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিভাগে হৃদরোগের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে এখানে দুইজন কনসালটেন্ট ও সাতজন মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা চলছে।

মফস্বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হৃদরোগ চিকিৎসা প্রসঙ্গে কথা হয় ফেনী কার্ডিয়াক সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মুহাম্মদ মূসা হাসনাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিষ্ঠার সাত বছরে আমাদের হাসপাতালে হৃদরোগ আক্রান্ত ১৮ থেকে ২০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১২ হাজার রোগীকে তাৎক্ষণিক গুরুত্বপূর্ণ রক্ত তরলীকরণ সেবা প্রদান করা হয়েছে। নানা অপ্রতুলতার মধ্যেও ফেনীবাসীকে সেবা প্রদান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া এ চিকিৎসায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অনেকটা ব্যয়বহুল। যার ফলে প্রতিষ্ঠান চাইলেও সহজে কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং তাদের ধরে রাখা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং।

এদিকে আজ বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে ফেনীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করেছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। আজ সকাল ১০টা থেকে ‘প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন’ এ স্লোগানে শহরের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে।

তারেক চৌধুরী/এমএন