শেরপুরে আবারও বন্যার আশঙ্কা, নদীপাড়ে আতঙ্ক
উজানে বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শেরপুরের পাহাড়ি জনপদে। কারণ উজানের ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢল নেমে এসে, সৃষ্টি হয় আকস্মিক বন্যার। ১৯৮৮ সালের পর শেরপুরবাসী ২০২৪ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়।
গত বছরের সেই বন্যার ক্ষত এখনও শুকায়নি। এরই মধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে আবারও ঝিনাইগাতী উপজেলায় আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ফের বন্যার সতর্কবার্তা পাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার তিন উপজেলার নদীপাড়ের মানুষদের মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ১ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে জেলার ভোগাই, সোমেশ্বরী ও কংস নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। সতর্কসীমার কাছাকাছি অথবা তা অতিক্রম করে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরের বন্যায় যে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তা কাটিয়ে ওঠা এখনও কঠিন হয়ে আছে। আবারও বন্যা হলে একই দুর্ভোগে পড়তে হবে। উজানে বৃষ্টি শুরু হলেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ বন্যায় শেরপুরের সাত হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়, ভেসে যায় দেড় হাজারের বেশি পুকুর ও ঘেরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সড়ক, শতাধিক সেতু ও কালভার্ট। প্রাণ হারান ১০ জন।
একইভাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের আমন ক্ষেত প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭১০ হেক্টর জমির রোপা আমন ও ৬৫ হেক্টর জমির সবজি। ঢলের তীব্র স্রোতে প্রাণ হারান দুজন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত বছর আগাম বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও সতর্কবার্তা এলাকায় প্রচার করা হয়নি, ফলে মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছিল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, গত বছরের বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়েছিল। তা মোকাবিলায় বিভিন্ন দপ্তরের কাজ এখনো চলছে। আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা ও ৭০০ টন চাল মজুত আছে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে আরও চাহিদা দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকায় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গেও সভা হয়েছে।
১৯৮৮ সালের বন্যার পর শেরপুরবাসীর জীবনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বয়ে আনে ২০২৪ সালের বন্যা। সেই ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বন্যার শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার নদীপাড়ের মানুষ।
নাইমুর রহমান তালুকদার/এআরবি