পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলে দমকা হাওয়া বইছে। উত্তাল রয়েছে সাগর। হঠাৎ ঢেউ ও বাতাস বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে মাছধরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে আগেভাগেই ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন জেলেরা।

জানা গেছে, সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষ্যে আগামী ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার আগে সুযোগ কাজে লাগাতে জেলেরা সাগরে গিয়েছিলেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ট্রলারগুলো ঘাটে ভিড়েছে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, ঝড়ো হাওয়া ও ঢেউয়ে সাগরে যাওয়া এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সংসারের চাপে কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাগরে নামছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কথা ভেবেই ফিরে আসছেন ঘাটে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের ফলে উপকূলীয় এলাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেন তারা।

স্থানীয় জেলে আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসার চালাতে ঋণ নিয়ে সাগরে নামি, কিন্তু ঝোড়ো বাতাসে মাছ ধরা অসম্ভব হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতেই ঘাটে ফিরতে হচ্ছে। সবার মাথায় এখন ঋণের বোঝা। কী আছে ভাগ্যে আল্লাহ ভালো জানেন।

ট্রলার মালিক মো. হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগে একটু মাছ ধরার আশায় সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাগর এত উত্তাল হয়ে উঠল যে কিছুই করা গেল না। এবার সরকার কি হিসেবে অভিযানের তারিখ ঘোষণা করেছে তা আমাদের মাথায় আসে না। 

ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞার আগে ঝুঁকি নিয়ে জেলেরা সাগরে যায়। এবার আবহাওয়ার কারণে আগেভাগেই ফিরে আসতে হচ্ছে, এতে বাজারেও মাছের সংকট দেখা দেবে।

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান সময়ে সাগরে অনুকূল পরিস্থিতি একেবারেই নেই। গভীর নিম্নচাপের কারণে যেকোনো মুহূর্তে দমকা হাওয়া ও উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে। এতে ছোট নৌকা ও মাছ ধরার ট্রলারগুলো বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই আমরা জেলেদের সাগরে গভীরে না গিয়ে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দিচ্ছি। একই সঙ্গে তাদের যেকোনো সময়ের নির্দেশ মেনে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতিও রাখতে হবে।

হাতিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফাহাদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণে ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা সফল করতে আমরা নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছি। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সাগর ও নদীতে টহল জোরদার করা হবে। কেউ আইন অমান্য করে মাছ ধরতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসিব আল আমিন/আরএআর