সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরে এখনও ফিরেনি বেশিরভাগ ট্রলার। ঘাটজুড়ে নেই কোনো ব্যস্ততা কিংবা ট্রলার ফেরার চিহ্ন।

এখনো ট্রলারগুলো সমুদ্রে মাছ ধরছে কিনা- এ প্রশ্নে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রলারগুলো বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ঘাটে অবস্থান করছে, সমুদ্রে নেই। তবে মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রশাসন জানিয়েছে, কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে আলীপুর ও মহিপুর ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ৫০-৬০টি ট্রলার সেখানে অবস্থান করছে। অথচ পূর্বে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বা দুর্যোগকালে এই দুই ঘাটে হাজার হাজার ট্রলার ভিড় করত। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

উল্লেখ্য, আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে, যা চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো মাছের উৎপাদন বাড়ানো ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক ট্রলার আগেই মাছ ধরে দেশের বিভিন্ন বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে যেমন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বাঁশখালী, বরগুনা, পাথরঘাটা, ভোলা ও মোংলায়। এতে করে আলীপুর ও মহিপুর ঘাটে মাছ বেচাকেনা এবং ব্যবসা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে ঘাটে কর্মরত হাজারো শ্রমিক যেমন বরফকল কর্মী, বস্তাবাহক, পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা কাজ হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

আলীপুরের বরফকল মালিক আব্দুর রহিম খান বলেন, প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞার আগে ঘাটে প্রচণ্ড ভিড় হয়, বরফ বিক্রি বাড়ে, জাল মেরামতের কাজও বাড়ে। কিন্তু এবার ঘাট প্রায় ফাঁকা, বরফ বিক্রিও নেই বললেই চলে।

মহিপুর মৎস্য বন্দরের আড়তদার মো. আসিফ মাহমুদ বলেন, আলীপুর ও মহিপুরে মালিকানাধীন ট্রলারের সংখ্যা কম। এখানে মাছ বাজারজাত সহজ হওয়ায় সারা বছর বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলার আসে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার সময় তারা নিজ এলাকায় ফিরে যায়। তাই ঘাট এখন ফাঁকা।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, মাছের প্রজনন ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই এবং ৪ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এসময় জেলেদের জন্য বিকল্প আয় ও খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সমুদ্রে অভিযান চালানো হবে। ট্রলারগুলোর গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কেউ যদি সমুদ্রে থেকে মাছ ধরে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের সরকারি জেলে কার্ড আছে, তারা সরকারি সহায়তার চাল পাবেন। তবে আলীপুর-মহিপুর ঘাটে ট্রলার না ফেরায় এখানকার অনেক শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

এসএম আলমাস/এআরবি