ঝালকাঠির সেই শিশুটির পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই
চার বছরের শিশু রাইসা মনির ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল খান, রাইসার খালা মোসা. শাহানাজ বেগমের পক্ষে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন। এতে রাইসার বাবা রাকিব হোসেন ও সৎ মা কলি বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শেখ মোহাম্মদ রুবেল মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এফআইআর আকারে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
গত ৫ অক্টোবর ঢাকা পোস্টে ‘ঝালকাঠিতে চার বছরের কন্যা শিশুকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। সংবাদটি দেখে আইনজীবীরা মানবিকভাবে উদ্যোগী হন। এরপর প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি কিছু গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে।
আইনজীবী, সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকরা শিশুটির পাশে দাঁড়ান। ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল খান স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধির মাধ্যমে রাইসার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিনামূল্যে আইনি সহায়তার ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞাপন
অ্যাডভোকেট ফয়সাল খান বলেন, রাইসার ওপর নির্যাতনের খবর দেখে আমি গভীরভাবে মর্মাহত হই। তাই আমি তার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। মামলার প্রতিটি ধাপে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি। এমনকি ফটোকপি দোকানি থেকে শুরু করে আদালতের পিয়ন পর্যন্ত সবাই বিনা পারিশ্রমিকে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য রাইসা যেন ন্যায়বিচার পায়।
ঝালকাঠি সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশনাল কর্মকর্তা সুব্রত কুমার দেবনাথ জানান, ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত উভয় পক্ষকে নিয়ে ঝালকাঠি সদর থানায় একটি পারিবারিক সম্মেলন হয়। যদিও কোনও লিখিত সমাধানে পৌঁছানো যায়নি, তবে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় রাইসা আপাতত খালার কাছেই থাকবে।
বাদী শাহানাজ বেগম অভিযোগ করেন, তার ছোট বোন সুমাইয়া আক্তারের স্বামী রাকিব ২০২৩ সালে সুমাইয়াকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীতে সুমাইয়া মারা যান। এরপর রাকিব পুনরায় বিবাহ করেন কলি বেগমকে। সুমাইয়ার রেখে যাওয়া শিশু রাইসাকে শাহানাজই লালন-পালন করছিলেন। শিশুটি তাকে মা বলে ডাকত। কিন্তু রাকিব ও কলি বেগম শিশুটিকে জোর করে কলিকে মা বলতে বাধ্য করতেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাকিব প্রায়ই রাইসাকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে রাকিব শিশুটিকে খালার বাড়ি থেকে নিয়ে যান। পরদিন গুরুতর আহত অবস্থায় রাইসাকে উদ্ধার করেন শাহানাজ। শিশুটির মাথা, চোখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা যায়। চিকিৎসকরা তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছাড়পত্র ও মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, শারীরিক নির্যাতনের ফলে শিশুটির মাথার ডান পাশে অক্সিপিটাল হাড় ভেঙে হেমাটোমা (রক্তজমাট) হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাদী আরও জানান, থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে এবং মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।
শাহানাজ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাইসার অবস্থা ভালো নয়, তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। আমরা গরিব মানুষ, দিন চলে কোনো রকমে। আপনারা পাশে না দাঁড়ালে ওর বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
শাহীন আলম/এআরবি