গবাদিপশুর রোগ অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) প্রতিরোধে সরকারের নির্ধারিত ৮০ পয়সা মূল্যের টিকা পেতে গুনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টিকা কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ের প্রাণিসম্পদ কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত স্বল্পমূল্যের টিকা নিয়েও চলছে প্রকট বাণিজ্য। উপজেলার কয়েক লাখ গবাদিপশুর টিকা কার্যক্রমে পশুমালিক ও খামারিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি টিকার মূল্য ৮০ পয়সা হলেও পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে কেউ এর বেশি টাকা নিলে তা অনিয়ম হিসেবে গণ্য হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। 

এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পীরগাছায় আটজনের পাশাপাশি মিঠাপুকুর উপজেলাতেও একজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ রোগ ছড়িয়েছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাতেও, সেখানে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়া একজনের মৃত্যুও হয়েছে। এতে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় আতঙ্কে রয়েছেন খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, গরু জবাইয়ের আগে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অনুমতি দেওয়ার কথা থাকলেও মাঠকর্মীদের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় পরীক্ষা ছাড়াই জবাই হচ্ছে গবাদিপশু। ফলে আক্রান্ত গবাদিপশুর মাংস খেয়ে কাউনিয়ায় কয়েকজন অসুস্থ হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজনকে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলায় এই রোগে নয়জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন।

জরুরি বৈঠকে উপজেলার সব গবাদিপশুকে দ্রুত টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় অভিযোগ—সরকারি ৮০ পয়সার টিকা দিতে খামারিদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

শহীদবাগ ইউনিয়নের খামারি আব্দুল্লাহ আল আনন্দ বলেন, আমার চারটা গরু আর দুটো বকরি আছে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দুজন লোক এসে টিকা দিয়ে গেলেন। প্রতি পশুর জন্য ৫০ টাকা করে নিয়েছেন।

আরেক খামারি আব্দুস সালাম জানান, সরকার বলে টিকা ফ্রি দিছে, কিন্তু মাঠে গেলে টাকা চায়। না দিলে নানা অজুহাতে টিকা দেয় না। প্রথমে ৫০ টাকা না দেওয়ায় টিকা দেয়নি, পরে আবার এসে ৫০ টাকা নিয়ে টিকা দিয়েছে।

ছোট খামারি রহিম উদ্দিন বলেন, আমরা ছোট খামারি- গরু বাঁচাতে টিকা দরকার। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই নিচ্ছি। কিন্তু এটা অন্যায়।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ সরকারি উদ্যোগে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রমে হাটবাজারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহযোগিতা করছে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভ্যাকসিনের সরকারি মূল্য ৮০ পয়সা হলেও পরিবহন ও অন্যান্য খরচসহ ১০ টাকা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমার কাছেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ এসেছে, সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। তবুও কেউ বেশি টাকা নিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দায়ীদের বাদ দেওয়া হবে।

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, সম্প্রতি পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় জরুরি টিকা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে আগে জানতাম না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল হাই বলেন, ভ্যাকসিনের সরকারি মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/রংপুর