বিএনপি নেতার হুকুমেই হামলা হয় পুলিশ কর্মকর্তার ওপর : পুলিশ
নরসিংদী শহর বিএনপির সহ সভাপতি ও পৌর শহরের ইজারাদার আলমগীর হোসাইনের হুকুমেই হামলা চালানো হয় নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর। এমনটাই মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকার মাহমুদুর রশিদের ছেলে ফজলুল রশিদ ওরফে আদর (৪০) ও হুমায়ুন কবিরের ছেলে মো. সোহাগ মিয়া (৩৫), বৌয়াকুর এলাকার শওকত মিয়ার ছেলে তানভীর মিয়া (২২), শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁও এলাকার শামসুল হক খন্দকারের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৪), বালিয়া এলাকার শামসুল আলমের ছেলে শান্ত মিয়া (২৩) এবং সদরের হাজীপুর এলাকার বিরাজ খার ছেলে কুদরত হাসান (২৩) ও মো. রকিব খাঁ (৩০)। তাদের মধ্যে ফজলুল রশির আদরের নামে হত্যা মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ সাইয়াদুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই শহর বিএনপি নেতা আলমগীর হোসাইনের অনুসারী বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এর আগে, গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে পৌর শহরের আরশীনগর এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়ের বাধা ও দুই চাঁদাবাজকে আটকের ঘটনায় নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলা চালায় চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় শনিবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতেই শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল আহমেদ বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় স্থানীয় বিএনপি নেতা ও পৌর ইজারাদার আলমগীরকে হুকুমের আসামি করে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে আটজন পুলিশ সদস্য নরসিংদী সদর উপজেলার বীরপুর এলাকায় একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে আরশীনগর মোড়ে তারা দেখতে পান, কয়েকজন ব্যক্তি অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। এ সময় পুলিশ দুইজনকে হাতেনাতে আটক করলে পেছন থেকে অন্য চাঁদাবাজরা হামলা চালায়। হামলাকারীরা আনোয়ার হোসেনের ঘাড়, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং আটক দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এর কয়েকদিন পূর্বেই নরসিংদীর সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম। তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে পোস্টও দেন। বিষয়টি নিয়ে হুমকিধমকি পেলে তিনি তার ওপর যে কোনো সময় হামলার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। এসব হুমকির মধ্যেই হামলার শিকার হন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, বীরপুর এলাকা থেকে ফেরার পথে দেখি কয়েকজন যুবক চলন্ত গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছে। জিজ্ঞাসা করতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন মিলে মব তৈরি করে আমার ওপর হামলা চালায়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। আমি পড়ে গেলে লাথি, কিল ও ঘুষি মারে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
অটো চালক সুমন, রহিম ও আব্দুল কুদ্দুস সহ একাধিক চালকের সাথে কথা বললে তারা জানায়, পৌর শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পৌর চাঁদার নামে বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত টাকা তুলে। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলেই গাড়ি আটকে রাখাসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি অকথ্যভাষায় গালাগালি করে। এমনকি মারধরও করা হয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও পৌর ইজারাদার আলমগীর হোসাইনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনার পরপরই অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ও পৌর ইজারাদার আলমগীর হোসাইন বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমাকে সরাসরি বললে ভালো হতো। কিন্তু তিনি আমাকে না জানিয়ে ঘটনাস্থলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হয়তো রোদে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে থাকতে পারেন। ওনার লোকজন হামলায় জড়িত নন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নরসিংদী পৌর প্রশাসক ৭টি স্থান নির্ধারিত করে দিয়েছেন, সে নির্ধারতি স্থানের মধ্যে আরশীনগর মোড় এলাকা রয়েছে বলেও দাবি করে ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন
এদিকে নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মনোয়ার হোসেন দাবি করেন, উচ্চ আদালত হাইওয়ে থেকে চাঁদা তুলতে নিষেধ করেছে, পৌরসভা থেকে নয়। তাই আলমগীরকে বৈধভাবে নরসিংদী শহরে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রতি ২৫ টাকা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রতি ১০ টাকা হারে দৈনিক টাকা তুলতে গত ১ বৈশাখে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নরসিংদী শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানামতে আলমগীর হোসাইন নরসিংদী পৌর শহরের একজন বৈধ ইজারাদার হিসেবেই টাকা তোলেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনাটি সম্পূর্ণ ন্যাক্কারজনক। আমরা দল থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে লিখিতভাবে আলমগীর হোসাইনের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ও সিনিয়র নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
এআরবি