ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক
ক্যাম্প অফিস তালাবদ্ধ, সরাইল-বিশ্বরোডে নেই ১২ কর্মকর্তার কেউ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশ এখন এক ‘দুর্ভোগের নাম’। প্রতিদিনই আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ যানজটে পরিণত হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সসহ শত শত যানবাহনকে।
এ অবস্থায় গতকাল বুধবার (৮ অক্টোবর) বেহাল মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান স্বচক্ষে দেখেন পরিস্থিতির ভয়াবহতা। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় যানজটে আটকে থেকে শেষে মোটরসাইকেলে চড়ে সরাইল-বিশ্বরোডে পৌঁছান তিনি।
বিজ্ঞাপন
সেখানেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপদেষ্টা নির্দেশ দেন— সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ১২ কর্মকর্তাকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে কাজ তদারকি করতে হবে।
তিনি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এখানে যদি কাউকে না পাওয়া যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করা হবে।
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টার এই কঠোর নির্দেশনার পর দিন বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে সরাইল-বিশ্বরোড ঘুরে দেখা যায়— যে অফিসে কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক থাকার কথা, সেটি তালাবদ্ধ। কোনো কর্মকর্তা মাঠে নেই, এমনকি আশপাশেও তাদের দেখা মেলেনি। অথচ সকাল থেকেই ওই এলাকায় আবারও যানজট তৈরি হয়েছে, যা দুপুরের দিকেও অব্যাহত ছিল।
স্থানীয় যাত্রী ও চালকদের ভাষ্য, উপদেষ্টা এসে কথা বলে গেছেন, অফিস খুলে কাজ শুরু হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু আজ তো অফিসেই তালা ঝুলছে।
আরও পড়ুন
২০২০ সালে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পের কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। কিন্তু নানা জটিলতা, আর্থিক ধীরগতি ও জুলাইয়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল-বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন পড়ে আছে। অসংখ্য গর্ত, ভাঙা রাস্তা ও চলমান খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। অনেক সময় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে।
যানজট নিরসন ও সংস্কার কাজ তদারকিতে সড়ক বিভাগ গঠন করেছে ১২ সদস্যের কমিটি। এতে রয়েছেন— ঢাকা-সিলেট করিডোর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন প্রকল্পের পরিচালকসহ সওজের বিভিন্ন সার্কেল ও প্রকল্পের ব্যবস্থাপকরা। কিন্তু বাস্তবে এ কমিটির কেউ মাঠে নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ–আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল আওয়াল মোল্লা বলেন, সরাইল-বিশ্বরোডে এখন বড় কোনো যানজট নেই। আমাদের মূল অফিস রামরাইলে, সেখানে থেকেই কাজ করছি।
তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়— মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানবাহনের সারি, ধীর গতিতে এগোচ্ছে ট্রাক ও বাস।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকালে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরুর পর থেকেই যানজট তৈরি হয়। বিশ্বরোড মোড়ের দুই পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকে আছে। পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছে।
বুধবার পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান স্পষ্ট করে বলেন, যানজটের মূল কারণ ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। হাইওয়ে পুলিশ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। রাস্তা মেরামত করলেই হবে না, প্রথমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।
মাজহারুল করিম অভি/আরএআর