উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে সিলেট নগরী এক ঘণ্টা ‘অচল’
সড়ক, রেল, আকাশপথ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেছে সিলেটবাসী। রোববার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট নগরীর প্রধান এলাকাগুলোতে দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
নাগরিক নানা সমস্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির ডাক দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
এ কর্মসূচিতে বেলা ১১টা বাজতেই সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, বন্দরবাজারসহ আশপাশের এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে চলাচলরত যানবাহনও থেমে যায়। নগরজুড়ে নেমে আসে এক ধরনের নিস্তব্ধতা। এ সময় কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সমাবেশ, যেখানে অংশ নেন বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলমত নির্বিশেষে সবাই সিলেটের উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে অংশ নেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেটবাসী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সব খাতেই সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সিলেটের ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়নি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ দীর্ঘদিন ধরে থেমে আছে। শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থাও করুণ। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সিলেটে পর্যটক আগমন কমে গেছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত যানজট সিলেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
রেলওয়ে ব্যবস্থার দুরবস্থা নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ১৮৬২ সালে চালু হওয়া রেলওয়ে আজও মান্ধাতা আমলের নিয়মে চলছে। টিকিট পেতে দালালের কাছে যেতে হয়, সময়মতো ট্রেন ছাড়ে না এমনকি দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। তিনি রেল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট, অথচ বিভাগে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭০০ মেগাওয়াট। এর ফলে প্রতিদিনই লোডশেডিংয়ে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সিলেটে গ্যাস থাকবে, আর সিলেটবাসী গ্যাস পাবে না তা মেনে নেওয়া যায় না। যেখানে খনিজসম্পদ উৎপাদন হয়, সেই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। গ্যাস সংযোগ না দিলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা তুলে ধরে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন,রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, অথচ দেশে ফেরার পর নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিমান ভাড়ায়ও তারা নাজেহাল। তাই ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত বিমান চালু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন,সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষকের ৫২৬টি পদ শূন্য। শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে তা দ্রুত পূরণ করতে হবে।
২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর সিলেটের জন্য পাঠানো একটি পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এই মেয়র বলেন, অন্য চারটি বিভাগে বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সিলেটে হয়নি এটাই বৈষম্য।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে আয়োজকরা বিভিন্ন দাবি-সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি উপস্থাপন করা হয়। সমাবেশে ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সবাই স্লোগান দেন সিলেটের অধিকার ফিরিয়ে দাও, বৈষম্যের অবসান চাই।
মাসুদ আহমেদ রনি/আরএআর