অনেক কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে রোজগার করে আমার বাবা। সেই উপার্জনের টাকায় আমাদের সংসার চলে। সংসারের হাল ধরার জন্য ৮ মাস আগে ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে ভাইকে সৌদি পাঠায়ছিল বাবা। স্বপ্ন ছিল দেনা পরিশোধ করে নতুন একটা ঘর দেবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আকামা করার জন্য রাখা ৩ লাখ টাকার জন্য আমার একমাত্র ভাইরে মাইরা ফালাইছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে কান্না করতে করতে কথাগুলো বলেন সৌদি আরবে খুন হওয়া বাংলাদেশি যুবক সবুজ মাতুব্বরের (২৪) ছোট বোন রিয়া মনি আক্তার। নিহত সবুজের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুর গ্রামের মেছেরমোল্লার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার ভ্যানচালক আব্দুল জলিল মাতুব্বরের একমাত্র ছেলে। বর্তমানে নিহত সবুজের পরিবারসহ গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

এর আগে সৌদি আরবে ১৫ দিন নিখোঁজের পর গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) মরুভূমির মধ্যে থেকে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া অবস্থায় সবুজের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সৌদি পুলিশ। তবে চেহারা বিকৃত হওয়ায় চেনা না গেলেও পরনের পোশাক দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন সৌদিতে থাকা পরিচিত বাংলাদেশিরা।

পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গত আট মাস আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব যান সবুজ। প্রথমে রিয়াদে ও পরে কাজের খোঁজে আল কাসিম এলাকায় থাকা শুরু করেন তিনি। ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে দেন ভ্যানচালক বাবা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর কথা বলে ফোন রাখেন সবুজ। গত এক অক্টোবর সকালে টাকা না আসায় ওইদিন দুপুরে ফোন দিলে তার নম্বর বন্ধ পান বাবা। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। একপর্যায়ে সৌদিতে থাকা অন্যদের কাছ থেকে খবর পান এক অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সবুজ আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) সবুজের বসবাসস্থল আল কাসিম এলাকার মরুভূমি থেকে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া অবস্থায় তার খুঁজে পায় সৌদি পুলিশ। এসময় সবুজের পরিচয় শনাক্ত করেন এবং খবরটি বাড়িতে পৌঁছে দেন সেখানে থাকা অন্য বাংলাদেশিরা। এদিকে খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েন অসহায় পরিবারের সদস্যরা।

প্রতিবেশী মান্নান ফকির বলেন, ভ্যান চালিয়ে রোজগারের টাকায় পরিবারটির চলে। লাশ আনার টাকা-পয়সা নাই। যাওয়ার সময় তার কাছে প্রথম আকামা করার প্রায় ৩ লাখ টাকা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে টাকার জন্যই সবুজকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে থাকতো হয়তো তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

নিহত সবুজের চাচা খোকন মাতুব্বর বলেন, সবুজের লাশটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবুজ যে প্যান্ট ও গেঞ্জি গায়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল, ওই পোশাক দেখে আশপাশে থাকা পরিচিতরা বুঝতে পারে লাশটি সবুজের। প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল সবুজ।

নিহতের বাবা জলিল মাতুব্বর বলেন, বাড়িতে ১০ হাজার টাকা পাঠাইতে চাইছিল। আমার সঙ্গে ওইটাই শেষ কথা হইছে। এতোদিন নিখোঁজ থাকার পর ওখানে লাশ পাইছে। সৌদি থেকে আমাদের জানাইছে লাশ সবুজের। আমরা এখন কি করমু?

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে যতটুকু পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করবো। লাশ আনার বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এমএএস