পঞ্জিকার পাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে ঝিনাইদহের প্রকৃতি। শরতের শুভ্রতা আর হেমন্তের নান্দনিক বিদায়ী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে হেমন্ত ঋতু। এই হেমন্তই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনের বার্তা। যদিও হেমন্তে কনকনে শীত পড়ে না, তবুও সকাল ও সন্ধ্যায় হালকা ঠান্ডা হাওয়া যেন শীতের আগমনের আভাস।

এই আবহ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। হেমন্তের এ সময়টায় বাড়িতে বাড়িতে চলছে শীতের প্রস্তুতি। অগ্রহায়ণের শুরুতে কৃষকের উঠানে নতুন ধান উঠবে, সেই প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। গ্রামবাংলার প্রকৃতি এর মধ্যেই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনের বার্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চলতি মাসের ১০ তারিখের পর থেকে জেলায় শীতের আবহ শুরু হয়েছে। যদিও এখনো হেমন্তকাল, তবে অগ্রহায়ণের নতুন ফসল ঘরে তোলার মধ্য দিয়ে এই ঋতুর বিদায় ঘটবে। ইতোমধ্যে জেলার গ্রামাঞ্চলে মৃদু শীতের আমেজ স্পষ্ট। বিশেষ করে ভোরবেলা হালকা কুয়াশা এবং রাতের ঠান্ডা হাওয়া বেড়েছে। এই হালকা শীতেই মানুষ তাদের শীতকালীন প্রস্তুতি শুরু করেছে। গরম কাপড়, কাঁথা, কম্বল পরিষ্কার ও ব্যবহারযোগ্য করতে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা। চলছে এসব কাপড় রোদে শুকানোর কাজ।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের গৃহবধূ চম্পা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্ষাকাল শেষ, এখন আর বৃষ্টির জের নেই। আগে বাড়ির চারপাশে ঝোপজঙ্গল আর কাদাপানি থাকতো, এখন শীতের টান এসেছে। আঙিনা পরিষ্কার রাখার কাজ করছি প্রতিদিন। অগ্রহায়ণে নতুন ধান উঠবে, তাই আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের নাটাবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জলী খাতুন বলেন, কার্তিক মাসের শুরু থেকেই গ্রামে শীতের প্রস্তুতি শুরু হয়। লেপ-কাঁথা তৈরি, পুরনো গরম কাপড় ধুয়ে রোদে শুকিয়ে রাখা সব কাজ একসাথে চলে। অগ্রহায়ণে আমন ধান উঠবে, ধান মাড়াইয়ের জন্য উঠান পরিষ্কার করাও জরুরি। প্রতিটি বাড়িতেই সবাই মিলে এসব কাজ করি।

গাড়ামারা গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী কৃষক ফতেহ বিশ্বাস জানান, আগে এই সময় গ্রামে গান-বাজনার ধুম থাকতো, নানা কুসংস্কারও ছিল। এখন অনেক কিছু বদলে গেছে। ছোটবেলায় এই সময়েই শীত পড়তো। আগে বউ-ঝিরা মাটি লেপে বাড়ি-ঘর সাজাতো, বৈঠকখানা পরিপাটি করতো। এখন অনেক কিছু নেই, তবে লেপ-কাঁথা বানানো এখনো চলে। গ্রামের নারীরা একে অপরের সঙ্গে গাতা করে একসাথে কাজ করেন।

হলিধানী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন বলেন, এলাকার প্রকৃতির পরিবর্তন বোঝা সত্যিই কঠিন। এক সপ্তাহ আগেও প্রচণ্ড গরম আর বৃষ্টিতে মানুষ কষ্টে ছিল। এখন সকাল-সন্ধ্যায় শীতের হালকা আমেজ। প্রকৃতিতে এক ধরনের প্রশান্তি এসেছে। কৃষকরা মাঠে সবজি রোপণ করছে। হেমন্তকাল আসলে শীত নয়, কিন্তু শীতের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। এই সময়টাই নতুন ফসল ঘরে তোলার মৌসুম।

জেলা শহরের পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আমার বাড়ি শহরের পাশে গ্রামে। আমি শহর ও গ্রামের জীবনের পার্থক্য দেখেছি। বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতি ছয় ঋতুর মধ্যেই জীবন্ত। পঞ্জিকা অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ শীতকাল, আর কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। এই ঋতু বৈচিত্র্যই আমাদের বাংলাদেশকে প্রাকৃতিকভাবে অনন্য করে তুলেছে। এখন কার্তিক মাস। এই সময়টা অনেক পরিবর্তন আনে প্রকৃতিতে। দিনের বেলায় মাঝারি গরম থাকলেও বাতাসে সারাদিন মৃদু শীত থাকে। ভোরবেলা কুয়াশা, ফসলের ডগায় শিশির, শাকসবজির ঘ্রাণ আর সবুজ ধানক্ষেত- সব মিলিয়ে হেমন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি রঙিন হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এআরবি