ফেনীর দাগনভূঞায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঘরে-বাইরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনপদের মানুষ। চলতি বছরের অক্টোবরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত এ উপজেলায় ১৭৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যা জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর ৪৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। এদিকে ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী এ সংক্রমণে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলার ছয় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে দাগনভূঞায়। জুন মাসে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ফেনী সদর উপজেলায়। জুলাই মাসে ফুলগাজী ছাড়া অন্য পাঁচ উপজেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। ওই মাসে ফেনী সদর উপজেলায় ২৫ জন, দাগনভূঞায় ১ জন রোগী শনাক্ত হয়। আগস্ট মাসে ফেনী সদর উপজেলায় ৪৬ জন ও দাগনভূঞায় ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে ফেনী সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ১০১ জন ও দাগনভূঞায় ৬০ জনে পৌঁছায়।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৩৬৪ জন। এর মধ্যে দাগনভূঞায় ১৭৫ জন, ফেনী সদরে ১৩৭ জন, ছাগলনাইয়ায় ২২ জন, সোনাগাজীতে ১৬ জন, পরশুরামে ১৩ জন ও ফুলগাজীতে ১ জন রোগী রয়েছে। ১৬ অক্টোবর দাগনভূঞায় একদিনেই নতুন করে আরও ১৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯ জন রোগী।

ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখীর কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম সোহরাব আল হোসাইন বলেন, এ উপজেলায় ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ঘনবসতি। পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে বাইরের এলাকা থেকেও ভাইরাস আসছে। আবার খাল-ডোবায় জলাবদ্ধতা, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার কারণে এডিস মশার বিস্তার বেড়ে গেছে। এছাড়া দাগনভূঞার দাদনা খালসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি ও অপরিষ্কার পরিবেশ মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ জনসচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম করছি। তবুও মানুষ সচেতন নয়। মাঠপর্যায়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে পানি জমে আছে, ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। মানুষকে সচেতন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে মশা নিধন কার্যক্রম চলমান রেখেছি। এতে জনবলও বাড়ানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। যথাযথ সেবা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। মূলত দাগনভূঞায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হচ্ছে। জমে থাকা পানি দ্রুত সরাতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ডেঙ্গু পরীক্ষা ও শনাক্তকরণে কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমানে জেলায় ৩ হাজার ৩৮৭টি পরীক্ষার কিট মজুদ রয়েছে।

তারেক চৌধুরী/এমটিআই