অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি প্রতিদিনই মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। গত বুধবার (২২ অক্টোবর) ছিল তার ব্যস্ততম দিনগুলোর একটি। তবুও তিনি সময় বের করেছেন দুটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গার্মেন্টস শ্রমিক এনামুল হক বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় বসবাস করেন। মাসে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান তিনি। তার নয় বছর বয়সী ছোট ছেলে মান্তাহার মাহমুদ এক সময় ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ। হঠাৎ তার হাঁটা-চলার সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি DMD নামের এক বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত। এই রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই এবং বিদেশে করাতে হলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।

অসহায় এই বাবা-মা একে একে সব দরজায় কড়া নাড়লেও সহযোগিতা মেলেনি। শেষ পর্যন্ত তারা দেখা করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে।

জেলা প্রশাসক মনোযোগ দিয়ে শুনেন মান্তাহারের অসুস্থতার বিস্তারিত। তিনি লক্ষ করেন, মান্তাহারকে তার মা মিতা বেগম সারাক্ষণ কোলে করে রেখেছেন। শিশুটির কষ্ট ও মায়ের মমতা দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ সহায়তা দেন এবং একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার প্রদানের জন্য মিতা বেগমকে লিখিত আবেদন করতে পরামর্শ দেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মিতা বেগম বলেন, ডিসি স্যারের আন্তরিকতা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। অফিসের প্রতিটি কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। স্যারের সঙ্গে দেখা করতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়নি।

গার্মেন্টস শ্রমিক এনামুল হক দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তার সন্তানের চিকিৎসায় সহযোগিতার হাত বাড়ানো হয়।

ঠিক এই সময় জেলা প্রশাসকের কাছে আসেন ফতুল্লা থানার ভূইঘর পাসপোর্ট অফিস এলাকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরুন্নবী প্রধান। তিলের খাজা বিক্রি করে সংসার চালানো নুরুন্নবী ও তার স্ত্রী লতা আক্তার দুজনেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তাদের এক বছর বয়সী ছেলে আলিফ পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছে, চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। জেলা প্রশাসক তাদের কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং নগদ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। এরপরই তিনি পরবর্তী নির্ধারিত সভায় যোগ দেন।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে যারা আসেন, তারা একটা আশার আলোর খোঁজে আসেন। আমি সবসময় চেষ্টা করি তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে এবং যা পারি তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিতে। সরকারি নিয়মে হয়তো সবাইকে একসঙ্গে সাহায্য করা সম্ভব হয় না, কিন্তু আমি কাউকেই ফিরিয়ে দেই না।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি আমি প্রতিদিন চেষ্টা করি এমন কিছু করতে, যা মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। এই কাজগুলো আমার কাছে দায়িত্বের পাশাপাশি আনন্দও।

এমএএস