সিরাজগঞ্জে মাদকসেবী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এইডসের বিস্তার, শনাক্ত ২৫৫
সিরাজগঞ্জে দ্রুত বাড়ছে এইচআইভি (এইডস) পজিটিভ রোগীর সংখ্যা, যা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ইনজেকশন দিয়ে মাদক গ্রহণকারী, তবে কলেজ, জাতীয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়।
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি চিকিৎসা কেন্দ্র (এআরটি সেন্টার) সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত জেলায় মোট ২৫৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ইনজেকটিভ ড্রাগ ব্যবহারকারী ১৮৭ জন, শিক্ষার্থী ২৯ জন, সাধারণ নাগরিক ৩৫ জন এবং যৌনকর্মী ৪ জন। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৬ জন।
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাসুদ রানা বলেন, এ বছর (২০২৫ সালে) আমি ৩১ জন নতুন রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ১৩ জন এমএসএম (ম্যান হু হ্যাভ সেক্স উইথ ম্যান) বা পুরুষে পুরুষে সমকামী, এবং তারা সবাই শিক্ষার্থী। ২৫৫ জন রোগীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি মাদকসেবী, যারা একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে মাদক সেবন করেন।
তিনি আরও বলেন, একই সিরিঞ্জ পাঁচজন পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এসব মাদকসেবীর বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ- রিকশাচালক বা ভাঙারি ব্যবসায়ী।
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহার বলেন, এখানে সব পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জ হাইরিস্ক এলাকা হিসেবে পরিচিত। আগে থেকেই এখানে যৌনকর্মীর সংখ্যা বেশি ছিল। আমাদের কাউন্সিলর রোগীদের মানসিক ও অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন
এদিকে সিরাজগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জ মাদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে কাজ করে। আমরা নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করি। ইনজেকটেড ড্রাগে থাকা প্যাথেটিন দিয়েও মাদকসেবীরা নেশা করে। এটি রেস্ট্রিকটেড পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান এটি বিক্রি বা সরবরাহ করতে পারবে না, অনুমতি ব্যতীত কেউ ব্যবহারও করতে পারবে না। আমাদের আইনগত পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ইনজেকশনজাত নিষিদ্ধ নেশাজাত দ্রব্যের কারণে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অধিকাংশ মাদকসেবী নিম্নআয়ের মানুষ, যারা একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে মাদক গ্রহণ করেন। ফলে সিরাজগঞ্জে এইচআইভি সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
নাজমুল হাসান/এআরবি