১৫ মাসের শিশুর মাথাজুড়ে বাসা বেঁধেছে বিরল রোগ, অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ
১৫ মাসের শিশু সিফাত। জন্মের পর তার মাথার পেছনে জড়ুলের মতো ছোট্ট একটি কালো দাগ সবার নজরে আসে। চিকিৎসকদের কাছে গেলে তারা অভয় দিয়ে বলেন- বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক হয়নি, উল্টো বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাথার পেছনের সেই দাগ ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করা শুরু করে। ১৫ মাসে তার মাথার পেছনে সম্পূর্ণ ছড়িয়ে গেছে রোগটি। এতে আতঙ্কে রয়েছে পরিবার।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর দক্ষিণ চর ভূরুঙ্গামারী গ্রামের আশরাফুল ও শরিফা দম্পতির প্রথম সন্তান সিফাত।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের চিকিৎসকরা সিফাতকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও দরিদ্র পরিবারটি অর্থ সংকটে তা করতে পারেনি। সময়ক্ষেপণ করায় ধীরে ধীরে রোগটি আরও ভয়ানক আকার ধারণ করছে। হঠাৎ যে কেউ দেখলে চমকে উঠবেন। সন্তানের সুচিকিৎসায় সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশরাফুলের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সবাই মাছ কেনাবেচা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সামান্য আয়ে চলে তাদের সংসার। প্রথম পূত্র সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু সন্তানের মাথার পেছনের ছোট্ট একটি কালো দাগ তাদের আনন্দে যে জল ঢেলে দেবে সেটা কল্পনা করেননি তারা। সিফাতকে প্রথমে ভূরুঙ্গামারী ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা রোগের নাম বলতে পারেননি, উল্টো শিশুটিকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, এটি একটি বিরল ধরনের বংশানুক্রমিক চর্মরোগ। যাকে ‘কিউটিস ভার্টিসিয়া জাইরাটা (সিভিজি)’ নামে অভিহিত করা হয়। সার্জারির মাধ্যমে এটি অপসারণ করা সম্ভব। তবে এটি দ্রুত বিস্তার লাভ করায় বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। কালক্ষেপণ না করে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহ করতে না পেরে হতাশ। দুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের দিন।
সিফাতের মা শরীফা খাতুন বলেন, এটা জন্মগত অবস্থায় ছিল। ভীষণ চুলকায়। চুলকালে রক্ত বের হয়। এজন্য ছেলে কান্নাকাটি করে। আগে ছোট ছিল এখন মাথা বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাকা সংগ্রহ করতে পারছি না। ফলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। ছেলের জন্য বুক ফেটে কান্না আসে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
সিফাতের বাবা আশরাফুল আলম বলেন, আমার ছেলেকে দুই মাস হলো রংপুরে দেখাইছি। বর্তমানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। আমি যে টাকা ইনকাম করি সেই টাকা দিয়ে ছেলের চিকিৎসা হবে না। এজন্য চিকিৎসা করাতে পারছি না। সন্তানকে নিয়ে খুব বিপদে আছি।
সিফাতের দাদা হামিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে সিফাতকে দেখাই। তারা রোগের নাম বলতে পারেনি। তাদের পরামর্শে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানকার ডাক্তারও রোগের নাম না বলে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছেন। অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় নাতিকে ঢাকায় নিতে পারছি না। আপনারা সহযোগিতা করলে তাকে ঢাকায় নেওয়া সম্ভব।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মো. সায়েম বলেন, এটি একটি বিরল ধরনের স্ক্রিন ডিজিজ। বংশানুক্রমে এটি বিস্তার লাভ করে। শিশুটিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব।
মমিনুল ইসলাম বাবু/আরএআর