গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে চার বছর আগে রিকশাচালক ছকু মিয়া হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী ছেলে মোজাম্মেল হককে (২২) পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিএনপি নেতাসহ কয়েকজন তার ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার লালবাজার এলাকার একটি স্কুল মাঠে। গুরুতর আহত মোজাম্মেল বর্তমানে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় রোববার (২৬ অক্টোবর) রাতে মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় দামোদরপুর ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি রঞ্জু মিয়াকে (৪২) প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার পাঁচ ভাইসহ মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

হাসপাতালের শয্যাশায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, বাবার হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে আমরা শুরু থেকেই হুমকির মুখে আছি। ভয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে বোনসহ ঢাকায় থাকতে হয়েছিল। আদালতে হাজিরা দিতে গ্রামে এলেই ওরা হামলা চালায়। হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি লড়াই চালিয়ে যাব। হত্যা মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে অভিযুক্তরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলা তুলতে চাপ দিচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আদালতে হাজিরা দিতে ঢাকা থেকে গ্রামে আসেন মোজাম্মেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় লালবাজারে পৌঁছালে রঞ্জু মিয়া ও তার ভাইসহ ৮-১০ জন তাকে স্কুল মাঠে ডেকে নেয়। সেখানে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়। অস্বীকৃতি জানালে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর মিয়া (৫৫), রাখু মিয়া (৫০), মঞ্জু মিয়া (৪০), সঞ্জু মিয়া (৩৫), মন্টু মিয়া (৩২), আবুল কাশেম (৫৭), শিশির আলিফ (১৮), সিফাত সরকার (২২) ও সাগর মিয়া (২০)।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজ উদ্দীন খন্দকার বলেন, ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ জুন পূর্ব দামোদরপুর (পুটিমারি) গ্রামের রিকশাচালক ছকু মিয়া মারা যান। ওই বছরের ১৬ জুন নিহতের ছেলে মোজাম্মেল হক আদালতে পিটিশন মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। বর্তমানে মামলাটি গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ মে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মন্টু মিয়ার কলেজপড়ুয়া মেয়ে মোজাম্মেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মন্টু মিয়াসহ কয়েকজন ছকু মিয়াকে আটক করে নির্যাতন চালায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে ছকু মিয়ার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মন্টু মিয়া ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হককে আসামি করে গাইবান্ধা আদালতে অপহরণের মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, মোজাম্মেলকে মারধরের ঘটনাটি আসলে তার বাবার ওপর চালানো নির্যাতনেরই ধারাবাহিকতা। তারা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

রিপন আকন্দ/এআরবি