প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের উদ্যোগ নিলে এমপি কেনাবেচার বাজার হবে বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের কাজী খলিলুর রহমান মিলনায়তনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ৩০০ আসনের এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদই গুছিয়ে পরিচালিত করা যাচ্ছে না, সেখানে আরও ১০০ আসন যুক্ত হলে তা ব্যবসায়িক লেনদেনের হাতিয়ারে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত না হলে উচ্চকক্ষ যুক্ত করে কোনো লাভ হবে না, বরং তা দুর্নীতির নতুন পথ খুলে দেবে। নির্বাচন হলে বর্তমান এককক্ষ সংসদকেই বহাল রাখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, এখন দরকার সচেতন ও শিক্ষিত ভোটার তৈরি করা। নির্বাচন কমিশন যে সময়সীমা ঘোষণা করেছে, আমরা আশা করি ইউনূস সরকারের নির্ধারিত ডেডলাইনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নির্বাচন। সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে মিটিং হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন নীতিমালা প্রণয়ন করছে, রাষ্ট্রের প্রস্তুতিও দৃশ্যমান। আমি মনে করি, এবার জনগণ নতুন প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দিতে প্রস্তুত হচ্ছে।

ভোটারদের সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বয়সের কারণে ভোটার নয়, চিন্তায় ভোটার হতে হবে। কাকে ভোট দেব, কেন দেব—এটা বুঝে ভোট দিতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, ভোটারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব বোঝাতে হবে—কোনটা করা যাবে, কোনটা নয়।

রাজনৈতিক অনিয়ম নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে সৎ মানুষ রাজনীতিতে আসে না, কারণ তাদের কালো টাকা নেই। ভোটারদেরও অনৈতিক সুবিধা না নিতে শিখতে হবে। চায়ের দোকানে কারও কাছ থেকে কিছু খেলে বা সুবিধা নিলে তারা নিজেরাই সৎ রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

নির্বাচনী ব্যয় প্রসঙ্গে ফুয়াদ বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের জন্য ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু বাস্তবে একেকটি আসনে নির্বাচনের দিনেই ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। রাষ্ট্র যখন কোটি কোটি টাকা অন্য খাতে খরচ করতে পারে, তখন গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্বাচনে খরচ করতেও পারে। তাই আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, রাষ্ট্র যেন নির্বাচনের ব্যয় বহন করে।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের নাৎসিকে কেউ প্রশ্নই করেনি তারা থাকবে কি থাকবে না, অথচ আওয়ামী লীগ নির্বিচারে হত্যা, গুম, গণহত্যা করেও এখনও টিকে আছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে না। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করেছে, বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা দুর্বল করেছে।

সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধান মৃত সংবিধান। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে কিছু যায় আসে না, কারণ জনগণ তাদের চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনেই তার প্রমাণ মিলেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর ইউনূস সরকারকেই আমি সবচেয়ে সফল বলে মনে করি। কারণ ৫ আগস্টের পরে দেশে দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধ হতে পারতো। এদিক থেকে এ সরকার সফল।

মতবিনিময় সভায় এবি পার্টির ঝালকাঠি-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী শেখ জামাল হোসেনকে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ।

তিনি বলেন, ঝালকাঠির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নদীভাঙন রোধে এবি পার্টি কাজ করতে চায়। তবে শহরের পরিচ্ছন্নতায় সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

সভায় এবি পার্টির জেলা আহ্বায়ক মো. জামাল হাওলাদার, সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বশিরসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময়ে স্থানীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাও অংশ নেন।

মো. শাহীন আলম/এএমকে