খেলনা ভেবে হাতে নিয়েছিলেন মাইন। মুহূর্তেই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে চারদিক। ছিটকে পড়ে ছোট্ট শরীরটি। সেই বিস্ফোরণে উড়ে যায় দুই হাত, ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি চোখ। বয়স তখন মাত্র আট।

সেইদিনের ছোট্ট শিশু আব্দুল হাকিম এখন স্কুলের শিক্ষক, শত শিক্ষার্থীকে দেখাচ্ছেন আলোর পথ। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বড়রাউতা ইউনিয়নের বড়রাউতা গ্রামের দক্ষিণ বড়রাউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি। শারীরিক অক্ষমতা নয়, মানসিক দৃঢ়তা, এই বিশ্বাসেই তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের জীবন।

আব্দুল হাকিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। খেলনা ভেবে মাইন হাতে নিয়েছিলেন ছোট হাকিম। বিস্ফোরণে রক্তে ভেসে যায় চারপাশ। চিকিৎসা হলেও হারানো হাত আর ফিরে আসেনি। ক্ষতবিক্ষত চোখও আর আগের মতো দেখতে পায় না।

তবু হাকিম থেমে থাকেননি। সমাজের অবহেলা আর কটুবাক্য পেরিয়ে তিনি শুরু করেন নতুন জীবন। মুখ ও কাঁধের জোরে লেখেন ব্ল্যাকবোর্ডে, নেন ক্লাস, পরিচালনা করেন পরীক্ষা। দুই হাত না থাকলেও তিনি আজ তার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম।

আব্দুল হাকিম বলেন, মানুষ বলত আমি কিছুই করতে পারব না, ভিক্ষা করে খেতে হবে। কিন্তু আমি ঠিক করেছিলাম, আমি দেখিয়ে দেব, আমি পারি। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টা দিয়েই আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি।

দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক হাকিম এখন পরিবারসহ সুখে আছেন। চাকরির পাশাপাশি ছেলের ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানেও সময় দেন তিনি।

বড়রাউতা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখি, হাকিম স্যার হাতছাড়া সব কাজ করেন। তিনি অদম্য মানুষ।

আরেক বাসিন্দা আনারুল ইসলাম বলেন, তিনি শুধু শিক্ষক নন, আমাদের সবার অনুপ্রেরণা। দুই হাত না থাকলেও যেভাবে পড়ান, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলে, আমাদের স্যার সব সময় সময়মতো স্কুলে আসেন, নিজে লেখেন, আমাদের ভালোভাবে শেখান।

সহকর্মী শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, হাকিম স্যার দায়িত্ববান ও পরিশ্রমী। সব কাজ নিখুঁতভাবে করেন।

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাকে সহায়তার প্রয়োজন হলে সহায়তা করা হবে।

এএমকে