অসুস্থ মা, সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাট গোপালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম।
 
জানা গেছে, উপজেলার শহিদুল ইসলাম এক সময় শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। এ সময় অন্যের জমিতে একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে দুই সন্তান, বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সবকিছু ছেড়ে স্বপরিবারে প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকায় চলে যান তিনি। এর কিছুদিন পর এলাকায় ফিরে এসে দেখতে পান জমির মালিক তার মাথা গোঁজার জায়গাটি অন্য কাজে ব্যবহার করছেন। এরপর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন।

এরপর বিভিন্ন দোকানের বারান্দাসহ উপজেলা বিভিন্নস্থানে রাত্রিযাপন করা শুরু করেন। এভাবে কেটে যায় ১১টি মাস। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনের বারান্দায় পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা পরিষদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এতে শহিদুল ইসলামের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

পরে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে খোলা আকাশের নিচে দুুই শিশু সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন।

শহিদুলের মা ছকিনা বেওয়া (৬২) বলেন, বাবাগো আমাগোর বাড়িঘর নাই। অনেক দিন ধইরা ছোট দুইটা নাতি ও ছেলের বউকে নিয়ে উপজেলার বারান্দায় থাকতাছি। বৃহম্পতিবার দারোয়ান টোপলা-টাপলি নিয়া থানায় দিয়া আমাগোরে তাড়ায়া দিছে। এই ঠান্ডায় এহোন আমরা কই যামু? কোথায় থাকমু?

শহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, নিজের জায়গা-জমি না থাকায় কিছুদিন কবরস্থানের মতো ভুতুড়ে জায়গায় বসবাস করেছি। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি দয়া করে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় থাকতে দেন। শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতাম। মায়ের অসুখের কারণে ১ বছর আগে ঢাকা চলে যাই। এতে কাজটটিও চলে যায়। দুই শিশু সন্তান, অসুস্থ বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছি। কাজ করলে খেতে পাই, আর কাজ না পেলে অনাহারে থাকতে হয়। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘর নাকি ফাঁকা পড়ে আছে, সেখানকার কোনো একটি ঘর দিলে শিশু সন্তান দুটোকে নিয়ে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম।

শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, শহিদুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে সবকিছু ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। সে যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতে চায় তাহলে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) দীপ জন মিত্র বলেন, শহিদুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসের আবেদন করলে তাকে ঘর দেওয়া হবে।

মমিনুল ইসলাম/আরকে