ঠাকুরগাঁওয়ের নিখোঁজ সেই তিন মাদরাসাছাত্রী বাড়ি ফিরেছে
তামান্না, আয়েশা ও জুঁই
ঠাকুরগাঁওয়ের নিখোঁজ সেই তিন মাদরাসাছাত্রী অবশেষে দুই মাস পর ফিরে এসেছে। তবে তারা কোথায় ছিল, কীভাবে ফিরে এসেছে তা এখনো অজানা। ফিরে এলেও তারা মানসিকভাবে ভীত এবং খুব কম কথা বলছে বলে জানিয়েছে পরিবার।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ বাড়ির দরজায় মেয়েদের দেখা মেলে। এতে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম।
পরিবারের সদস্যরা ও ছাত্রী আয়েশার বাবা রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ শুনতে পাই মা-বাবা বলে কেউ গেটে ডাকছে। ঘর থেকে বের হতেই দেখি আমার নিখোঁজ হওয়া মেয়ে আয়েশা ডাকছে। তবে তাদের হাতে কিছুই ছিল না। খালি পায়ে আসে। কোথায় ছিল? কীভাবে এলো তারা কিছুই বলতে পারছে না। মেয়েরা কিছুটা মানসিকভাবে ভীত এবং কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের। তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। সুস্থ হলে জানা যাবে আসলে তারা কীভাবে এলো আর কোথায় ছিল।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেশী মালেক বলেন, মেয়েগুলোর ফিরে আসা আল্লাহর কৃপা। আমরা নিজেরাই হতবাক হয়ে গেছি। দুই মাস ধরে খোঁজ ছিল না- এভাবে ফিরে আসবে ভাবতেই পারিনি।
আরেক প্রতিবেশী শিরিন বেগম বলেন, এমন ঘটনায় মেয়েরা নিশ্চয়ই কোনো মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। প্রশাসনের উচিত তাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। মেয়েগুলো যেন নিরাপদ থাকে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল ইসলাম বলেন, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছিল। কেউ বলছিল অপহরণ, কেউ বলছিল পালিয়ে গেছে। কিন্তু তারা কীভাবে ফিরলো, কোথায় ছিল— এটা জানতে সবাই আগ্রহী।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, তিন ছাত্রী এখন পরিবারের হেফাজতে রয়েছে। তারা কোথায় ছিল, কার কাছে ছিল এসব জানার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর এলাকার আয়েশা সিদ্দিকা মাদরাসায় দেখা যায় নিখোঁজ তিন ছাত্রীকে। ভোর ৫টার সময় তাদের ডাকতে তাদের রুমে গেলে তাদের আর পাওয়া যায়নি। পরে মাদরাসার দোতলার বারান্দায় মশারি ঝুলন্ত অবস্থায় বাঁধা দেখতে পেয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ধারণা করে তারা পালিয়ে গেছেন।
শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, নিখোঁজ তিন ছাত্রী রাত ১টার দিকে একটি রিকশা করে প্রথমে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে যায়। এরপর রিকশা বদল করে তারা ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে যায়। তবে সেই রাতে কোনো ট্রেন না পেয়ে রোড আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। পরে হোটেল ম্যানেজারের সাহায্যে তারা স্টেশনে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে রোড অটোস্ট্যান্ডে ফিরে যায় এবং ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে একটি অটোরিকশা নিয়ে রওনা হয়। এরপর থেকেই তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
রেদওয়ান মিলন/আরএআর