ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর তৃষ্ণাকে জমিসহ ঘর উপহার জেলা প্রশাসকের
ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় নারী অনূর্ধ্ব–২০ ফুটবল দলের খেলোয়াড় তৃষ্ণা রানীকে সাড়ে চার শতক জমি ও একটি আধা পাকা ঘর উপহার দিয়েছেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃষ্ণার হাতে জমির দলিল হস্তান্তর ও নবনির্মিত আধা পাকা ঘরের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
বিজ্ঞাপন
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুমন চন্দ্র দাস, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল ইসলাম, তৃষ্ণার কোচ ও বোদা টু স্টার ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত “দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা তৃষ্ণা রানী এখন ‘গোলমেশিন’!” শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে আসে তৃষ্ণা রানীর দারিদ্র্য ও সংগ্রামী জীবনের গল্প।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে দিনমজুর বাবার ঘামে ভেজা গা, মায়ের না খেয়ে থাকা দিন এমন কষ্টের বাস্তবতা এবং ফুটবলার তৃষ্ণার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
সংবাদটি জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর নজরে এলে তিনি নিজে থেকে তৃষ্ণার পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড় তৃষ্ণা রানী দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। অথচ তাদের পরিবারের নিজস্ব কোনো বসতভিটা বা উপযুক্ত ঘর ছিল না। চাচার বাড়ির একটি ছোট ঘরে থাকতে হতো। তার বাবাও অসুস্থ, মা ইটভাটায় কাজ করেন। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়ে চার শতক জমি রেজিস্ট্রি করে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার বাবাকে একটি দোকানঘরও দেওয়া হয়েছে; যেন তিনি পরিবারের ভার বহন করতে পারেন। তৃষ্ণা দেশকে আরও গৌরব এনে দেবে, এই প্রত্যাশা করি।
বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, নারী ফুটবল দলের গর্বিত সদস্য, বোদা উপজেলার রত্ন তৃষ্ণা রানীকে আমরা সাড়ে চার শতক জমি ও ঘর প্রদান করেছি। জেলা প্রশাসক নিজ হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি গুণিদের কদর করলে দেশে আরও গুণি মানুষের জন্ম হবে।
তৃষ্ণার কোচ ও বোদা টু স্টার ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল বলেন, তৃষ্ণা ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে আজ এই অবস্থানে এসেছে। অভাব-অনটন পেরিয়ে জাতীয় অনূর্ধ্ব–২০ দলে জায়গা করে নেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়। জেলা প্রশাসক তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণার।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তৃষ্ণা রানী বলেন, বহু কষ্ট, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ এখানে পৌঁছেছি। এখন মনে হচ্ছে আমি সত্যিই সফল। যারা একসময় নিরুৎসাহ করত, তারাই এখন উৎসাহ দেয়। জেলা প্রশাসক আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটা আমার জীবনের বড় পাওয়া। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
দিনমজুর বাবার ঘাম, ইটভাটায় কাজ করা মায়ের কষ্ট এসবের মাঝেই বড় হয়েছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ভাসাইনগর গ্রামের মেয়ে তৃষ্ণা রানী।
অন্যের জমিতে ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করতেন তারা। খেলার সরঞ্জাম কেনার টাকাও ছিল না, অনেক সময় খালি পেটে অনুশীলন করতেন তৃষ্ণা। তবুও থামেননি তিনি। তার হাত ধরেই পঞ্চগড়ের মেয়েরা ফুটবলের জগতে নতুন অনুপ্রেরণা পেয়েছে।
সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল, লাওসের বিপক্ষে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক—এসব পারফরম্যান্সে তৃষ্ণা এখন দেশের ক্রীড়ামোদীদের চোখে ‘গোলমেশিন’।
২০২২ সালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৫ টুর্নামেন্টে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে অনূর্ধ্ব–১৭, ১৯ ও ২০ দলে খেলছেন।
নেপালের বিপক্ষে শেষ মিনিটের গোল করে দলকে ফাইনালে তোলেন। এরপর জেতান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক গোল করে দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন পঞ্চগড়ের এই ফুটবলার।
সব কষ্ট, সব সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে এখন তৃষ্ণা রানীর একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশের হয়ে আরও গোল করা, আরও জয় এনে দেওয়া। তৃষ্ণা প্রমাণ করেছেন স্বপ্নের কাছে দারিদ্র্য কোনো বাধা নয়। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমই পারে জীবনের বাস্তবতাকে বদলে দিতে।
মো. নুর হাসান/এমটিআই