ভূমিকম্পে সিদ্ধিরগঞ্জে স্কুলসহ বহু ভবনে ফাটল
ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বহু ভবনের দেওয়াল, সিঁড়ি ও কলামে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ভবন দৃশ্যমানভাবে হেলে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বেশ কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলগুলোতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূমিকম্প শুরু হতেই ভবনগুলো তীব্রভাবে দুলতে থাকে। এতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে যান। বেশ কয়েকজন বলেন, কিছু ভবনে ফাটল ধরার সঙ্গে সঙ্গে ভবন সামান্য হেলে গেছে বলে তাদের ধারণা।
বিজ্ঞাপন
সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকা, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা, আল ইসলাম নগর, রনি সিটির ৪ নম্বর গলি ও ৫ নম্বর রোড—এসব জায়গায় বহু ভবনের দেওয়াল, কলাম, সিঁড়ি ও সাইড দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে। কিছু ভবনের সাইড দেওয়াল ভেঙে পাশের টিনশেড ঘরের ওপর পড়েছে, যদিও কেউ আহত হননি।
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভবনেও বড় ফাটল দেখা গেছে। ঘটনার পর ফাটল দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে।
স্কুলটির ইংলিশ মিডিয়াম শাখার ইনচার্জ কামাল উদ্দিন বলেন, আজ বৃত্তি পরীক্ষা চলাকালে ভূমিকম্পে ভবন হঠাৎ দুলে ওঠে। এ সময় পুরো স্কুলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সব ছাত্র-ছাত্রীকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনি। কেউ আহত হয়নি। তবে ভবনের একটি দেওয়ালে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাকদুম ভবন, প্রকৌশলী কুটির, শাহেনা নিবাসসহ আরও কয়েকটি বহুতল ভবনে দৃশ্যমান ক্ষতি হয়েছে। এসব ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মুক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আক্তার বলেন, টায়ার গলির একটি বহুতল ভবনের দেওয়ালে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কয়েকটি রুমের টাইলস ভেঙে পড়েছে।
হীরাঝিল আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে পুরো বিল্ডিংটা দুলে উঠল। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না কী হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেওয়ালে ফাটল দেখা যায়। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে নিচে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি।
রনি সিটির ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা লিপি বেগম বলেন, আমাদের সিঁড়িতে টাইলসে চিড় ধরেছে। রান্নাঘরের শোকেস থেকে জিনিসপত্র পড়ছিল। ভয়ে আমরা সবাই বাইরে বের হয়ে যাই।
আল ইসলাম নগরের বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, ভবনটা এমনভাবে দুলছিল, মনে হচ্ছিল পাশের দিকে হেলে পড়ছে। ভূমিকম্প থামার পর দেখি কলামে ফাটল। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব বুঝতে পারছি না।
মুক্তিনগরের কলেজছাত্রী নাদিয়া ইসলাম বলেন, আমি অনলাইনে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ টেবিল-চেয়ার কেঁপে উঠতে থাকে। নিচে নেমে দেখি পুরো গলির মানুষ রাস্তায়। পরে শুনলাম পাশের ভবনের কয়েকটা রুমের টাইলস ভেঙে গেছে।
ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও প্রকৌশলীরা ভবনগুলোর ঝুঁকির মাত্রা যাচাই করতে জরুরি পরিদর্শন শুরু করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ না করতে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আশপাশের আরও ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে—এসব ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ দলের দ্রুত পরিদর্শন জরুরি।
আদমজী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার মিলন মিয়া বলেন, কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বেশ কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কিছু ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আমদের তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
মেহেদী হাসান সৈকত/এএমকে