যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) ভাঙচুর করেছে বন্দি শিশুরা। শনিবার (১০ জুলাই) রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত কেন্দ্রের আবাসিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সিঁড়িঘরের দরজা ভেঙে ছাদে উঠে বিভিন্ন অপরাধে বন্দি থাকা কেন্দ্রের তিন শিশু পালিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় রোববার (১১ জুলাই) যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

এর আগে, টানা তিন ঘণ্টা ধরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ বন্দিরা। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের থাকা বন্দিদের অভিযোগ, কেন্দ্রে তাদের তিন বেলা ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। ভাত দেওয়া হয় হাফ প্লেট, রুটি দিলে দেয় এক পিস। তা ছাড়া স্বজনরা এসে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টদের কাছে টাকাপয়সা দিলেও সেগুলো মেরে দেওয়া হয় বলে জানায় শিশুরা।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, তিন বন্দি পালানোর ঘটনায় রোববার সকালে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। একটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১০টা থেকে কেন্দ্রের ভবনে দরজা বন্ধ করে ভাঙচুর করে শিশুরা বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় তারা কেন্দ্রের অন্তত ১০০টি বৈদ্যুতিক বাল্ব, ২টি টেলিভিশন, ৫০টির মতো পানির কল, ভবনের প্রধান দুটি কলাপসিবল ফটক, পানির পাইপ, তাদের শয়নখাট ও তাদের ব্যবহৃত প্লেট-গ্লাস ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা সিঁড়িঘরের দরজা ভেঙে ছাদে ওঠে।

এ সময় লোহার রেলিং ভেঙে নিচে নেমে তিনজন পালিয়ে যায়। সূত্রটি আরো জানিয়েছেন, খাবারের মান বৃদ্ধি, বিশুদ্ধ পানি, খেলাধুলার জন্য সময় ও সরঞ্জাম নিশ্চিতসহ কয়েকটি দাবিতে শিশুরা কয়েক মাস ধরে ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার কেন্দ্রে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্দ বন্দিরা।

রাকিব নামে এক বন্দি শিশু অভিযোগ করে বলে, কেন্দ্রে থাকা কর্মকর্তাদের পোষ্য কিছু বন্দিকে দিয়ে নিরীহদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রের পানিতে আয়রন, রান্না করা খাবারে দুগন্ধ, ডালের নামে হলুদ পানি দেওয়া হয়। কেন্দ্রের পানিতে ময়লা জীবাণু থাকে। যার কারণে অধিকাংশ বন্দিদের গায়ে ঘা-পাঁচড়া রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো প্রতিকার করেনি। বরং শিশুদের ওপর নির্যাতন করা হয়।

সে আরও বলে, পরিবারের সদস্যরা যখন আমাদের দেখতে আসে, তখন আমাদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয় না। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলে দেয়, আপনার সন্তান আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চায় না। এ ছাড়া পরিবার কোনো টাকা বা খাবার দিলে কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেরে দেয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদে আমরা সাধারণ বন্দিরা ভাঙচুর চালিয়েছি।

জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, দেড় শ জনের ধারণক্ষমতার কেন্দ্রটিতে ২৫০ জন বন্দি রয়েছে। বেশ কিছু দাবিতে তাদের অসন্তোষ রয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্দির বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কেন্দ্র ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। তিনি আরও বলেন, তাদের সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনাকালে কেন্দ্রের বন্দিদের বাইরে বের হতে দেওয়া হয় না। এ জন্য তাদের ক্ষোভ আছে। খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া সুপেয় পানির সমস্যা আছে। এমন বেশ কয়েকটি দাবিতে বন্দিরা বিক্ষোভ করেছে। আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, অব্যবস্থাপনায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গেল ১০ বছরে বিদ্রোহ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন বন্দি কিশোরের হত্যা ও ১৫ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল। একাধিক বার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে কেন্দ্রে বারবার এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাহিদ হাসান/এনএ