মাদুর তৈরির কাজে ব্যস্ত নারী শ্রমিক

একটা সময় নওগাঁর ৯০ শতাংশ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো হাতে তৈরি মাদুর বিক্রি করে। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক আসার ফলে হাতে তৈরি মাদুরের কদর কমে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার চুন্ডিপুর ইউনিয়নের সরদারপাড়া এলাকার ২০টি পরিবার মাদুর শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছেন।

কৃষক আলম মোল্লা বলেন, এক বিঘা জমিতে পাতি চাষে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সেই পাতি দিয়ে মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। তবে প্লাস্টিক আসার পর আবাদ কমে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদুর তৈরির মূল উপকরণ হলো-পাটের দড়ি, সামান্য বাঁশ আর নগদ কিছু পুঁজি।মৌসুমের বিশেষ এক সময়ে সাধারণ মানুষের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকে না। সে সময় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ বেকার সময় নষ্ট না করে সাংসারিক প্রয়োজনে মহাজনের কাছ থেকে পাতি নিয়ে বাড়িতে মাদুর তৈরি করেন। সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০টি মাদুর তৈরি করে হাট-বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে সংসার চালান। 

এদিকে, পাতি উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরের কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বছরই প্লাস্টিকের মাদুর তৈরির উপকরণ হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরাও এখন এ পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

ছাবিনা ইয়াসমিন নামে এক নারী বলেন, ৫ বছর ধরে কাজটি করছি। মাসে ১৫০ থেকে ২০০ মাদুর তৈরি করি। মহাজনদের কাছ থেকে পাতি নিয়ে প্রতি মাসে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে আয় করি।

কৃষক রকিবুল হক বলেন, বংশ পরম্পরায় এই পাতি চাষ এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে হতো। কিন্তু প্লাস্টিক পাতি আসায় এই শিল্পটি ধংসের মুখে।

আরেক নারী হালিমা আক্ষেপ করে বলেন, ৩০ বছর থেকে কাজ করছি। প্লাস্টিক আসায় মাদুরের কাজ কমে গেছে। এই কাজে খুব পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম না করলে সফলতা আসে না। তারপরও মাসে ১ থেকে ২ হাজার টাকা আসে।

চন্ডিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম মুকুল বলেন, এই অঞ্চলে ঘরে ঘরে মাদুর তৈরি হতো। এখন বাজারে প্লাস্টিক মাদুরের চাহিদা বেশি থাকায় সবাই সেদিকে ঝুঁকে পড়ছে। এখন যারা এ পেশায় নিয়োজিত আছে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। 

ফাতেমা ম্যাটস এর সত্ত্বাধিকারী মো. শহীদ আলী খান (ফারুক) বলেন, দুই বছর আগে ১০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্লাস্টিকের ম্যাটস এর ব্যবসা শুরু করি। এখন প্রায় ৬০ লাখ টাকা মূলধন দাঁড়িয়েছে। মেশিনের সাহায্যে দ্রুত তৈরি করা যায় সেই কারণে বেকার যুব-সমাজ প্লাস্টিক পাতির মাদুরের ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে পাতিচাষ হয়েছে। যা গত বারের চেয়ে প্রায় ১০ হেক্টর বেশি। এই এলাকার কৃষকদের জন্য উন্নত প্রজাতির পাতির বীজ, মাদুর তৈরির প্রশিক্ষণ ও কৃষি ঋণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

তিনি আরও বলেন, উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ সদর, রানীনগর ও আত্রাই ছাড়া অন্য কোথাও পাতি চাষ হয় না। তাই এসব সুবিধা দেওয়া আমাদের জন্য বেশ দুরূহ। তবে উন্নত প্রজাতির বীজ সরবরাহের ব্যাপারে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শিগগির উপজেলার কৃষকদের মাঝে উন্নত প্রজাতির পাতির বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। 

এসপি