রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ম নিয়েছে জোড়া লাগা দুই নবজাতক

১৮ ও ১৫ বছর বয়সী দুই ছেলের জনক-জননী আঙ্গুরি বেগম (৩৫) ও রুবেল হোসেন (৪২) দম্পতি। মেয়ের আশায় তৃতীয় সন্তান নেন তারা। তাদের সেই আশ পূরণ হয়েছে। কিন্তু কোলজুড়ে যমজ সন্তান এলেও খুশি হতে পারেননি এই দম্পতি। কারণ, এই যমজ জন্ম নিয়েছে জোড়া ও অভিন্ন পেট নিয়ে। নেই তাদের পায়ুপথও।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে জোড়া লাগা দুই নবজাতক জন্ম দিয়েছেন আঙ্গুরি বেগম।

জোড়া লাগা দুই নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক। আর এমন খবরে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে দরিদ্র রুবেলের মাথায়। অর্থের অভাবে ঢাকায় না নিয়ে নবজাতক নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি। প্রসূতি রয়ে গেছেন হাসপাতালেই।

আঙ্গুরি-রুবেল দম্পতির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিদিরপুর গ্রামে। এলাকায় ফেরি করে খুচরা পণ্য বিক্রি করেন রুবেল। অভাবের সংসারে দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ জোগাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়। তাই টুকটাক কাজ করে ছেলেরাও হাত লাগিয়েছে সংসারে।

এদিকে জোড়া লাগা দুই নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক। আর এমন খবরে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে দরিদ্র রুবেলের মাথায়। অর্থের অভাবে ঢাকায় না নিয়ে নবজাতক নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি। প্রসূতি রয়ে গেছেন হাসপাতালেই।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রসববেদনা নিয়ে রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রামেক হাসপাতালে আসেন আঙ্গুরি বেগম। তাকে হাসপাতালের গাইনি ইউনিট-২-এর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোর ৫টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগা নবজাতক দুটি জন্ম নেয়। উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে বেলা দুইটার দিকে নবজাতককে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

একই পেট নিয়ে নবজাতক দুটির জন্ম হয়েছে। তাদের কোনো পায়ুপথ নেই। পায়ুপথের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকদের দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক সাইফুল ফেরদৌস, উপপরিচালক, রামেক হাসপাতাল

কিন্তু ঢাকায় না নিয়ে পরিবার নবজাতক নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছে। যাওয়ার আগে হাসপাতালে আঙ্গুরি বেগমের মা আনোয়ারা বেগম জানিয়েছেন, অভাবের সংসার। নবজাতক দুটির চিকিৎসা কীভাবে হবে, তা নিয়ে তারা এখন দুশ্চিন্তায় আছেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি গিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করে তারা ঢাকায় যাবেন।

আনোয়ারা বেগম আরও জানান, প্রসববেদনা উঠলে রোববার সন্ধ্যায় আঙ্গুরি বেগমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসক জানান, এখানে তাদের অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। রাতেই তারা রামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এরপর সোমবার ভোরে এ দুই নবজাতকের জন্ম হয়।

নবজাতক দুটির দুটি করে হাত ও পা আছে। মাথা ও মুখমণ্ডল আলাদা, কিন্তু পেট একসঙ্গে লাগানো। পায়ুপথ বোঝা যাচ্ছে না। তাদের লিঙ্গও স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন, বাচ্চা দুটির একটি ছেলে এবং অন্যটি মেয়ে।

নবজাতকের অবস্থা জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে জানান, একই পেট নিয়ে নবজাতক দুটির জন্ম হয়েছে। তাদের কোনো পায়ুপথ নেই। পায়ুপথের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকদের দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এনএ