রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরণ। এতে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কাতড়াচ্ছেন অনেকেই। এর মধ্যেই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বিভিন্ন প্রান্তে থাকা লোকজন ফিরেছেন গ্রামে। পথে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেননি অনেকেই। আগামীকাল শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে গ্রামেই আটকা পড়তে পারেন ঘরে ফেরা লোকজনের একটি বড় অংশ।

অন্যদিকে ঈদের আগে অনেকেই কোরবানির পশু কিনতে গিয়েছিলেন হাটে। কী গ্রাম কী শহর সবখানেই বিপণীবিতানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঈদ জামাতেও ছিলো না স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ। অসচেতন চলাফেরায় ঈদের পর করোনা সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে রাজশাহী বিভাগের উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কতটা প্রস্তুত? তবে এনিয়ে প্রস্তুতি যথেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন  বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনার চিকিৎসায় বিভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল, নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল, পাবনা জেনারেল হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, জয়পুরহাট আধুনিক সদর হাসপাতাল, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। করোনা চিকিৎসার যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে এসব হাসপাতালে। এর বাইরে বিভাগের আট জেলার প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও উপজেলা হাসপাতালেও রয়েছে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা। 

জানা গেছে, গত ২১ জুলাই বিভাগে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে ৭ জনই বগুড়া জেলার বাসিন্দা। সিরাজগঞ্জে মারা গেছেন আরেকজন। এই এক দিনে বিভাগে করোনা ধরা পড়েছে ৪০২ জনের। এর আগে ২০ জুলাই বিভাগে করোনা প্রাণ নিয়েছে ৯ জনের। একই দিন করোনা ধরা পড়েছে ৯৩৩ জনের। এ ছাড়া ১৯ জুলাই বিভাগে করোনা ধরা পড়েছে ৮৮৭ জনের। ওই দিন প্রাণ গেছে ১২ জনের।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, বিভাগে করোনার ডেল্টা ধরণ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ কমতির দিতে। বগুড়া ও সিরাজগেঞ্জ জেলা ছাড়া অন্যা ছয় জেলায় সংক্রমণ কমছে। আমাদের কোভিড ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। এখন জেলা হাসপাতালে এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য  কমপ্লেক্সেও করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮/১০টি শয্যা রয়েছে। তাতে রোগীও ভর্তি রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের আগের চিকিৎসায় ধরণ ছিল হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলায় চিকিৎসা। সেটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে পরিচালনা করা কঠিন ছিল। এখন এর বিকল্প এসেছে। ফলে ঈদের পরে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবো।

ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজশাহী, বগুড়া ও নাটোরে হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু এখন কম আছে। ঈদের জন্য রোগী ভর্তি কম হতে পারে। আরও দু-একদিন গেলে বিষয়টি বোঝা যাবে। এখন কেবল বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে সংক্রমণ বেশি। তবে বিভাগের অন্যান্য জেলায় সংক্রমণ নিম্নমুখী। 

এদিকে বিভাগে করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় আয়োজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। দফায় দফায় শয্যা বাড়িয়ে ৫১৩ তে উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা রয়েছে আগের মতই ২০টি।

ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩৪ জন। এর মধ্যে করোনা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ২১০ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৬৬ জন। করোনা নেগেটিভ হয়ে ভর্তি রয়েছেন আরও ৫৮ জন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ২২ জন। এর মধ্যে ৭ জন করোনায় এবং ১৫ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এর আগে ২১ জুলাই ১৮ জন, ২০ জুলাই ২০ জন এবং ১৯ জুলাই ১৪ জন মারা গেছেন রামেক হাসপাতালে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের পর সংক্রমণ বাড়তে পারে। সেটি মাথায় রেখে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। যাতে কাউকে হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে না হয়।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, কদিন আগেও হাসপাতালে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি ছিল। কিন্তু প্রত্যেকেই অক্সিজেন পেয়েছেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে সামাল দেওয়ার অংশ হিসেবেই শয্যা বাড়ানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, কমিউনিটি সংক্রমণ হয়ে গেছে। এখন আর নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে না। তবে বাইরে থেকে যারা এসেছেন, তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকছেই। সবমিলিয়ে ঈদের পর ফের সংক্রমণ বাড়তে পারে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি রাখছি।

আরএআর