ছায়মন নেছা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের লাঙ্গল শিমুল গ্রামের ছায়মন নেছা (৭০)। দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেই তিনি টিকে আছেন জীবনযুদ্ধে। স্বামী জুনাব আলী গত হয়েছেন ১৫ বছর আগে।

এরপর এক ছেলেকে নিয়ে পড়েন অকূল পাথারে। বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছেন। কয়েকবার বিধবাভাতার জন্য চেষ্টা করলেও সেটি আর পাওয়া হয়নি অসহায় এ নারীর। 

তবে জীবনের এই শেষবেলায় এসে অবশেষে মিলেছে বয়স্কভাতার কার্ড। এই ভাতায় তার সংসারে আর্থিক কষ্ট কিছুটা ম্লান হবে, এই আশায় বুক বাঁধলেও সেই আশা যেন পরিণত হয়েছে নিরাশায়। কেননা তার বয়স্কভাতার টাকা যাচ্ছে অন্যের মোবাইল নাম্বারে।

জানা গেছে, লাঙ্গল শিমুল গ্রামে ছায়মন নেছার নিজস্ব কোনো থাকার জায়গা নেই। পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি থাকছেন মৃত আব্দুল আজিজের ভিটায়। এক ছেলে আব্দুল খালেক (৩০) একজন ভ্যানচালক। তার আয় দিয়েই তার মা এবং স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কোনোরকমে চলে তাদের সংসার। বয়স্কভাতা পেলে কিছুটা ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতেন এই বৃদ্ধা।

ছায়মন নেছার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বয়স্কভাতার আবেদনের সময় যে মোবাইলের নম্বর দেওয়া হয়েছিল সেটি অফিসের মাধ্যমে বদল করে তাকে কিনতে হয়েছিল নগদ অ্যাকাউন্টযুক্ত একটি সিম কার্ড। কিন্তু সেই নম্বরেও আসেনি ভাতার টাকা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার ভাতার ৬৭১ সিরিয়াল নম্বরধারী হিসেবে যে নগদ নম্বর দেওয়া হয়েছে এটার বদলে অন্য আরেকজনের নম্বরে যাচ্ছে টাকা। 

ছায়মন নেছা বলেন, এই ভাতার জন্য আমি অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। ভাতা পাব বলে খুব খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই ভাতার টাকা দিয়ে গেল ঈদে খরচ করব। কিন্তু জুন মাসে আশপাশে অনেকেই টাকা পেলেও আমি পেলাম না। অথচ ধার করা টাকা খরচ করে উপজেলা সদরে যাওয়া-আসা করেছি। সেটিও এখনো শোধ করেতে পারিনি। এখন কার কাছে যাব, কী করব? কিছুই বুঝতে পারছি না।

এমন সমস্যায় যে শুধু ছায়মন নেছা-ই পড়েছেন তা কিন্তু নয়। এমন অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন সমাজ সেবা অফিসে ভিড় করছেন অনেক ভুক্তভোগী। তারা মনে করছেন, সমাজ সেবা অফিসের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে এমনটা হচ্ছে। সেইসঙ্গে একটি প্রতারক চক্র সারাদেশে এমনভাবে প্রতারণা করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

উপজেলা আনুহাদী গ্রামের নার্গিস আক্তার নামে আরেকজন জানান, তিনি দুইবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন কিন্তু যখন অফিস থেকে সিম কিনেছেন এরপর থেকে আর টাকা পাচ্ছেন না।

উপজেলার কালাদহ ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম এবং সদর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাদল জানান, এইসব সমস্যা নিয়ে অনেকেই যোগাযোগ করছে। ঠিকমতো টাকা না পেয়ে অনেকের কাছ থেকে নানা ধরনের কথাও শুনতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো এ ব্যাপারে কোনো হাত নেই।

এমন সমস্যা নিয়ে কথা হয় ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ফুলবাড়িয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রেজাউল আফসারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলেছিলাম যাদের অ্যাকাউন্ট আগে থেকেই আছে তাদের আর নতুন সিম কেনার প্রয়োজন নেই। তারপরও এই গরিব মানুষকে দিয়ে আবার কষ্ট করিয়েছে সমাজসেবা অফিস। 

তিনি আরও বলেন, একটি প্রতারকচক্র সারা দেশে প্রতারণা করছে এমন ৪৮ এজেন্ট পয়েন্ট পেয়েছি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসান কিবরিয়া হয়রানির কথা অস্বীকার করে বলেন, উপজেলায় মোট ৪০ হাজার ২৩৯ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। অনেক ভাতাভোগী, তাই একটু সময় লাগছে। সবার টাকাই পৌঁছে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল ছিদ্দিক বলেন, এমআইএস করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যার যার মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠান। আমাদের এখানে আর কোনো কাজ নাই। তবে এমন সমস্যা নিয়ে অভিযোগ দিলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

উবায়দুল হক/এমএসআর