সব হারানো ইউপি সদস্য কদবানু পাচ্ছেন সরকারি ঘর
ইউপি সদস্য কদবানু
কদবানু। স্থানীয় বাসিন্দাসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ভালোবাসার আর শ্রদ্ধার এক মানুষ। শুধু পছন্দেরও নন, কদবানু একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। দেশে প্রায় সব জনপ্রতিনিধির বসবাস করার মতো ভালো মানের বসতি থাকে, কিন্তু কদবানুর একমাত্র অবলম্বন জনসাধারণের ভালোবাসা। এমন জনপ্রতিনিধির সমাজের সাধারণ মানুষের মাঝে খুব কমই দেখা মেলে না।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কদবানু। পুরুষশাসিত সমাজের নিয়মনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী একজন নারী কদবানু। কিন্তু নিজে এখন খুব সাধারণভাবে জীবন যাপন করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কদবানুর বয়স ৫১ বছর। ১৯৬৯ সালে সাইপাড়া গ্রামে জন্ম। পরিবারে বড় দুই ভাই ও ছোট দুই বোনের মধ্যে বড় তিনি। ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয় সাভার উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের তোতা মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের দুই বছর পরই কদবানুর কোলজুড়ে আসে একটি সন্তান। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই সন্তানও কম বয়সেই মারা যায়। তবু দিনমজুর স্বামীর সঙ্গেই চলছিল টানাটানির সংসার। হঠাৎ তার স্বামীও ক্যানসার রোগে মারা যান।
এদিকে স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই পাঁচ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। স্বামী-সন্তানসহ ভিটেমাটি হারিয়ে নিস্ব কদবানু উপায়ান্তর না পেয়ে ভাতিজা আব্দুল হকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়ির আঙিনার এক কোনায় একটি জরাজীর্ণ ছাপড়ায় বসবাস করছেন এখন এই জনপ্রতিনিধি।
বিজ্ঞাপন
সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর প্রদান প্রকল্প চলমান। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্যায়ে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ৩০টি ও অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দুই শতক জমি ও দুই কক্ষের একটি আধা পাকা ঘর হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্যে কদবানুও প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেব একটি ঘর পাবেন।
জানতে চাইলে সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কদবানু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউপি নির্বাচনে ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
আমাদের দেশে নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক জনপ্রতিনিধির অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। তবে ইউপি সদস্য কদবানুর জীবন সেই আগের ঘেরাটোপেই আছে। আমি গিয়েছিলাম সে বাড়িতে তার প্রকৃত অবস্থা দেখতে। কদবানুর এ রকম আশ্রয়হীন জীবন আর খুব বেশিদিন থাকবে না।
আশরাফুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
কদবানু আরও বলেন, নির্বাচন করার মতো কোনো পরিকল্পনা বা সামর্থ্য ছিল না তার। তিনি নিজেও কখনো চিন্তা করেননি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন। স্বামী-সন্তানসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে কারও পক্ষে নির্বাচনের চিন্তা করা সম্ভবও নয়। তবে ফুকুরহাটি ইউনিয়নের জনগণের চিন্তা ভিন্ন ছিল। তারা তাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েই বসে থাকেননি। এলাকাবাসী তাদের নিজ খরচে প্রচারণা থেকে যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে কদবানুকে ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।
কদবানু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারসরূপ আমি ঘর পেয়েছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। এই ঘর পেয়ে আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। জীবনে বাকি দিনগুলো সাধারণ মানুষের সেবায় কাটিয়ে যেতে চাই। ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান কদবানু।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক জনপ্রতিনিধির অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। তবে ইউপি সদস্য কদবানুর জীবন সেই আগের ঘেরাটোপেই আছে। ভাতিজার বাড়িতে আশ্রয়েই দিনাতিপাত করছেন। আমি গিয়েছিলাম সে বাড়িতে তার প্রকৃত অবস্থা দেখতে। ইউপি সদস্য হিসেবে সরকার থেকে পাওয়া মাসিক সম্মানী দিয়েই চলছে তার সংসার। এর মাঝেও তিনি জনসেবামূলক কাজ করে চলেছেন।
কদবানুর এ রকম আশ্রয়হীন জীবন আর খুব বেশিদিন থাকবে না। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দুই শতক জমি ও একটা সুদৃশ্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। কদবানুও দুই শতক জমি ও একটি আধা পাকা ঘর পাবেন। কদবানুর জীবনে সব হারানোর মাঝে এই প্রাপ্তিটুকু যুক্ত হবে বলে জানান ইউএনও।
এনএ