পদ্মা নদীর পানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে একদিকে যেমন বসতভিটাসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পদ্মাপারের অরক্ষিত অঞ্চলে দেড় মাস ধরে ভাঙন শুরু হয়ে এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এতে পদ্মাপারের মানুষের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ভাঙনকবলিত এলাকা ও বন্যায় প্লাবিত হওয়া এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি পয়েন্টে পদ্মার পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানিবৃদ্ধির ফলে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপর, কালুখালীর কালিকাপুর, রতনদিয়া, হরিণবাড়িয়া, সদরের মিজানপুর, বরাট ও গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা, দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। একই সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট। নষ্ট হয়েছে বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজি ক্ষেত।

জানা গেছে, পদ্মা নদীর পানিবৃদ্ধির ফলে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, খানগঞ্জ, কালুখালীর রতনদিয়া, হরিণবাড়িয়া, পাংশার বাহাদুর ও হাবাসপুর ইউনিয়ন ও গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নসহ ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তা ছাড়া এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকটও।

অন্যদিকে, গত দেড় মাসে রাজবাড়ী জেলা শহর সুরক্ষা বাঁধের নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনে দৌলতদিয়ার অন্তত অর্ধশতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে লঞ্চঘাটসহ ফেরিঘাট।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টার পরিমাপকৃত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টের মধ্যে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য দুটি পয়েন্টের মধ্যে পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। এবং সদরের মাহেন্দ্রপুর পয়েন্টে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে তিনটি পয়েন্টেই পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।

দেবগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা পরান শেখ বলেন, একে তো ঘরবাড়িতে পানি উঠে আইছে। তার ওপর আবার নদী ভাঙতেছে। আতঙ্কে রাতে ঘুমাইতে পারি না। গত বছর ভাঙনে আমার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদী কাইরা নিছিল। তারপর নতুন করে ঘার বাঁধছিলাম। এবার ঘরবাড়ি নদীতে গেলে পরিবার নিয়ে গাছতলায় থাকতে হবে। আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নাই।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি এখন থেকে কমতে শুরু করবে। যা বাড়ার তা বেড়েছে। ২৬ আগস্টের পর থেকে পানি কমলেও নদীভাঙনের আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের তালিকা প্রায় শেষ। প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমরা পানিবন্দি মানুষের মাঝে সহায়তা প্রদান করব। বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে আমাদের।

জেলা ত্রাণ ও পনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজবাড়ী জেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৭ হাজার ৫১৫ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে ১১০০টি, পাংশায় ১২৩০টি, গোয়ালন্দে ১৯৫০টি, কালুখালীতে ৩২০০টি ও বালিয়াকান্দিতে ৩৫টি পরিবার পানিবন্দি।

এসব মানুষের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ২ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সদরে পানিবন্দি মানুষের জন্য ৩৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবং বাকি ৪টি উপজেলায় ২০ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ