মোল্লাহাট উপজেলা মডেল মসজিদের শুধু নিচতলা নির্মাণ সম্পন্ন

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল ১০ মডেল মসজিদের। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও বাগেরহাটে নির্মিত হয়নি একটি মসজিদও। এর মধ্যে পাঁচটি মসজিদের কাজ এখনও শুরু হয়নি। বাকিগুলোর কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তবে গণপূর্ত বিভাগ বলছে, সব প্রতিবন্ধকতার সমাধান করে যতদ্রুত সম্ভব নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

দশটি মসজিদের মধ্যে ফকিরহাট, মোল্লাহাট, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলায় মডেল মসজিদের নিচতলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কারিগরি হিসেবে এই চারটি উপজেলায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কচুয়া উপজেলার মডেল মসজিদের সার্ভিস পাইলের কাজ চলছে।

এছাড়া স্থান নির্বাচন হলেও ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আটকে আছে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ। চিতলমারীতে মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্বাচিত জমিতে উপজেলা পরিষদের একটি স্থাপনা থাকায় কাজ শুরু করতে পারছে না গণপূর্ত বিভাগ।

মোংলায় পাইলিংয়ের কাজ শেষ হলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি স্থাপনার জন্য মূল ভবনের কাজ শুরু হয়নি। অন্যদিকে বাগেরহাট জেলা সদরে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য এখনও স্থান নির্বাচন করতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও প্রশাসন। খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে খানজাহান আলী মাজার মোড়ে সদর উপজেলার মডেল মসজিদের বালু ভরাট চলছে।

বাগেরহাট শহরের আলী আজম ও ফরিদ উদ্দীন বলেন, এত বড় শহরে তিন-চার বছরের মধ্যে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি জমি নির্ধারণ করতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এছাড়া মাজার মোড়ের যে জায়গায় মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এর চারপাশে অন্তত ৮ মসজিদ রয়েছে। একটু প্রত্যন্ত এলাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করলে ভালো হতো।

ভূমি জটিলতায় আটকে আছে বাগেরহাট সদর উপজেলা মসজিদের কাজ

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট জেলা সদরে একটি এবং ৯টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে একটি করে মডেল মসজিদ হবে। ৪৩ শতক জমির ওপর নির্দিষ্ট ডিজাইনে প্রতিটি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স হবে। এর মধ্যে জেলা সদরে চারতলা এবং উপজেলাগুলোতে তিনতলাবিশিষ্ট আধুনিক ভবন নির্মিত হবে।

চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে, তিনতলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদগুলোয় একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।

মসজিদে নারী ও পুরুষের পৃথক নামাজ আদায় ছাড়াও লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামি গবেষণা ও দাওয়া কার্যক্রম, হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা, লাশ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসের ব্যবস্থা থাকবে।

এই মসজিদগুলোতে ইবাদতের পাশাপাশি আরও অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধেও সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এছাড়া মসজিদগুলোতে প্রতিবন্ধীরা যাতে নামাজ পড়তে পারেন সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থাও থাকবে।

রিয়াজ শিকদার ও রানা আকুঞ্জি নামের দুই বন্ধু বলেন, অনেক জেলায় দু-একটি মসজিদের কাজ শেষ হলেও, বাগেরহাটে এখনো শেষ হয়নি, কবে শেষ হবে তাও জানি না। আমরা চাই জায়গা নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দ্রুত যেন এই মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।

বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কেএম ফরিদ হাসান বলেন, সারা বাংলাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণের ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয়রা সঠিক ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। এই প্রতিষ্ঠানটি মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাগেরহাট জেলার ১০টি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করার দাবি জানাই।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাগেরহাটের উপ-পরিচালক আল ফারুক বলেন, গণপূর্ত বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা যতদ্রুত সম্ভব মডেল মসজিদের কাজ সম্পূর্ণ করব।

বাগেরহাট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফতেহ আজম খান বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাগেরহাট জেলার ১০টি মডেল মসজিদের স্থান নির্ধারণ, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে নির্মাণকাজে কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারপরেও ফকিরহাট, মোল্লাহাট, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলায় মডেল মসজিদের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। কিন্তু মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট জেলা সদর, চিতলমারী, মোংলায় কিছু জটিলতা রয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করে দশটি মসজিদেরই নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারব।

তানজীম আহমেদ/এমএসআর