তিস্তা ও ঘাঘট গ্রাস করছে গঙ্গাচড়ার জনপদ
তিস্তাকে বলা হয় পাগলা নদী। বছরের বেশির ভাগ সময়ে এ নদীর বুক থাকে পানিশূন্য। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তিস্তার গতিমতি বদলে যায়। উজানের ঢলে যৌবন ফিরে পাওয়া নদী হয়ে ওঠে রাক্ষুসে। দীর্ঘ সময় পানিশূন্যতায় থাকার আক্ষেপ মেটাতে ভাঙতে থাকে নদীর দুকূল।
প্রতিদিন ভাঙনখেলায় তিস্তার পরিধি বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে নদীপাড়ের মানুষের আহাজারি। এবারও বদলায়নি এ নদীর স্বভাবসুলভ আচরণ। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, দফায় দফায় উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা এখন জলভরা।
বিজ্ঞাপন
তিস্তায় কখনো পানি বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তাতীরবর্তী ভাঙনকবলিত মানুষজন। অব্যাহত নদীভাঙনে বদলে যাচ্ছে সেখানকার কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মানচিত্র। তিস্তার সঙ্গে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে ঘাঘট নদেও।
গেল দুদিন ধরে গঙ্গাচড়ায় ঘাঘট নদের ভাঙনে বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে নদগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে কবরস্থান। হুমকিতে পড়েছে রাস্তাসহ ফসলি জমির খেত ও বেশ কিছু বসতভিটা। তিস্তার কোলঘেঁষা আলমবিদিতর ইউনিয়নের চওড়াপাড়ায় দুদিনের ভাঙনে ঘাঘটে ছয়টি পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার নগরবন এলাকার কবরস্থানটি এখন ঘাঘটে মুখের কাছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অনেক পরিবারকেই হতে হবে আশ্রয়হীন সর্বস্বান্ত।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, আলমবিদিতর ইউনিয়নের চওড়াপাড়ায় ঘাঘট নদের হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কে আছেন সেখানকার মানুষজন। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ভেঙে আসবাব নৌকায় নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছেন।
আবার কেউ কেউ বসতভিটা বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফসলি জমি আর জীবন-জীবিকার আশ্রয় হারিয়ে অনেকে অন্যের জমিতে নয়তো আত্মীয়স্বজনের আশ্রয়ে আছেন। দুদিন আগে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে আবার ভাঙন ভয় তাড়া করছে ঘাঘটপাড়ে।
ভাঙনকবলিত চওড়াপাড়ায় মতিয়ার রহমান জানান, তার মতো অনেকেই অর্থের অভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। এখন নদী থেকে একটু দূরে ঘরের চাল ও আসবাব নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু উপায় না থাকায় পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে রাতযাপন করছেন।
তিনি বলেন, মোর চোখের সামনোত আবাদি জমিগুলা, ঘরবাড়ি কত কিছু নদীত ভাঙি গেল। মেলা মাইনষের বসতভিটাও যায় যায় অবস্থা। ঘরবাড়ি যে সারে নিয়া অন্যটে যাইমেন, তারও তো টাকা লাগে। এই বানের সময় কোটে টাকা পামো। হামার তো চাইরোপাকে কপাল খারাপ। এমন করিয়ায় নদীর সাথে যুদ্ধ করি হামার জীবনটা চলি যাওছে।
একই এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তার একটি ঘর ও টয়লেট ভেঙে গেলেও অর্থসংকটে অন্য ঘর সরাতে পারছে না। পাশাপাশি গ্রামে আরও কিছু বাড়ি, রাস্তা ও আবাদি জমি ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে। নগরবনের এলাকায় ঘাঘটের ভাঙনে কবরস্থানটি ভেঙে যাচ্ছে।
ভাঙনের খবর পেয়ে শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় তারা ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে অবগত করেন। পরে ইউএনও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদানসহ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলীমা বেগম জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবগত করেছেন। তারা ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ