ফুটপাথে পড়ে নষ্ট হচ্ছে কাঠবাদাম

রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কদ্বীপ ও ফুটপাথে নষ্ট হচ্ছে কাঠবাদাম। বছর দশেক আগে লাগানো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) কাঠবাদাম গাছ ফল দিচ্ছে দুই বছর ধরে। সেই ফল পড়ে নষ্ট হচ্ছে গাছের নিচেই। তবে এটি আসলেই খাওয়ার উপযোগী কাঠবাদাম কি-না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

জানা গেছে, রাসিকের জিরো সয়েল প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগানো হয় কাঠবাদাম গাছ। কিছু গাছ লাগানো হয়েছে নগরীর হেতেমখাঁ কলাবাগান এলাকার সড়কের পাশে। নগরীর সপুরা শারীরিক শিক্ষা কলেজের সামনে থেকে-আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের সামনে সড়কের পাশেও রয়েছে কাঠবাদাম গাছ।

রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকালে আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের সামনে সড়কের পাশের কাঠবাদাম গাছের পাতা কুড়াচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব রাহেলা বেগম। নগরীর সুজানগর এলাকার বাসিন্দা এই বৃদ্ধা জানান, ১০ বছর আগে এই গাছগুলো লাগানো হয়। সেই থেকে তিনি পাতা কুড়িয়ে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।

বৃদ্ধা রাহেলা বেগম জানান, দুই বছর হলো গাছগুলোতে ফল এসেছে। চৈত্র মাসের দিকে ফল পাকে। কখনোই তিনি কাউকে সেই ফল কুড়াতে দেখেননি। নিজেও ফল কুড়াননি। ফলগুলো গাছের নিচেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে কয়েক মাস থেকে এলাকার শিশুদের কাঠবাদাম কুড়াতে দেখছেন।  

কাঠবাদামের ফল

নগরীর রেলগেট শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরের দুই পাশে সড়ক বিভাজকের ওপরে শোভা ছড়াচ্ছে ছোট বড় তিনটি কাঠবাদাম গাছ। গাছে শোভাবর্ধনকারী লাইটও ঝুলিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

সেখানকার সড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক সদস্য। নাম প্রকাশ না করে তিনি জানান, তিনটি গাছেই ফল আসছে প্রায় দুই বছর ধরে। সেগুলো পড়ে থাকে রাস্তায়। অনেক সময় পথচারীরা সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যান। অনেকেই তাকে জানিয়েছেন, এই কাঠবাদাম বেশ সুস্বাদু। কিন্তু তিনি কখনও এই কাঠবাদামের স্বাদ নেননি।

নগরীর রেলগেট এলাকায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়। সেখানকার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) উম্মে ছালমা এই পথ মাড়িয়ে রোজ অফিসে পৌঁছান। তিনি জানান, কৌতূহলবশত তিনিও একদিন রাস্তায় পড়ে থাকা কাঠবাদাম কুড়িয়ে এনেছিলেন। ভেঙে কাঠবাদাম পেয়েছেন। কিন্তু এই কাঠবাদামের স্বাদ বাজারে পাওয়া কাঠবাদামের স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এটি আসলে কোন প্রজাতির এবং খাওয়ার উপযোগী কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, কাঠবাদাম দেশের বেকারি আইটেমে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া এটি হার্টের জন্য উপকারী। বাজারে প্রতি কেজি কাঠবাদাম অন্তত ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। রাজশাহীর এই কাঠবাদাম খাবার উপযোগী হলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন যে জিরো সয়েল প্রকল্পের আওতায় কাঠবাদাম গাছ লাগিয়েছে। সেই প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ছিলেন তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। এই কাঠবাদাম আদতে সেই কাঠবাদাম কি-না তা নিয়ে সন্দিহান সদ্য অবসরে যাওয়া ওই প্রধান প্রকৌশলী। 

তিনি বলেন, ওই সময় বগুড়ার সবুজবাংলা নার্সারি থেকে ৪০-৫০টি  চারা এনে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে রোপণ করা হয়। মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবেই লাগানো হয়েছে এই গাছগুলো। এখন সেইগাছগুলো ফল দিচ্ছে। 

নগরীর বিভিন্ন চত্বর ও সড়কের পাশে প্রায় ৭০টি কাঠবাদাম গাছ লাগানো হয়েছে

তবে কোনো ধরণের গবেষণা ছাড়াই এই গাছ লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাসিকের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, নগরীকে সবুজ ও দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে নগরজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে কাঠবাদাম একটি। দুই দফায় নগরীর বিভিন্ন চত্বর ও সড়কের পাশে প্রায় ৭০টি কাঠবাদাম গাছ লাগানো হয়েছে। 

তবে রাজশাহীর এই কাঠবাদাম আসলে বুনো প্রজাতির বলে জানিয়েছেন উদ্যান বিশেষজ্ঞ ও পাবনার টেবুনিয়া হার্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, এই গাছগুলো ছায়া প্রদানকারী ও সৌন্দর্য বধর্নকারী হিসেবেই রোপণ করা হয়। তাছাড়া বাজারে যে কাঠবাদাম পাওয়া যায় এটির ফলের খোসা কাষ্ঠল হলেও নরম। কিন্তু বুনো কাঠবাদামের খোসা বেশ শক্ত। যা রাজশাহীর কাঠবাদামের সঙ্গে মিলে যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো আমন্ড বা কাঠবাদাম গাছ আমাদের দেশের প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখা কঠিন বলেও জানান এই উদ্যান বিশেষজ্ঞ।  

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, নগরীতে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যে লাগানো হলেও কাঠবাদাম গাছে ফল আসা শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়বে। আপাতত তারা কৃষকদের কাঠবাদাম চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন না। তারপরও কিছু সৌখিন বাগানমালিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাঠবাদাম লাগাচ্ছেন। এ সংখ্যাটা একেবারেই নগণ্য। 

তিনি আরও বলেন, দেশে উচ্চমূল্যের কাজুবাদামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশীয় চাহিদা পুরণ করে বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। এরই অংশ হিসেবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজুবাদামের বাগান হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র হয়েছে। প্রয়োজনে কাঠবাদাম প্রক্রিয়াজাতের আওতায় আনা হবে।

আরএআর