৮ হাজার মানুষের ভরসা একটা সাঁকো!
এ সাঁকোর ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের পুকুননিয়া, দড়ি মালঞ্চিসহ তিন গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। বিকল্প কোনো চলাচলের সড়ক না থাকায় এই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীকে।
স্থানীয়রা জানান, তাদের উদ্যোগে নির্মাণ হওয়া সাঁকোটি প্রতিবছর মেরামত করেন নিজেরাই। সাগরকান্দি ইউনিয়নের ফুলতলা ও পুকুননিয়া গ্রামের মধ্যখানে অবস্থিত বাদাই নদ, উত্তরে অবস্থিত দড়ি মালঞ্চি গ্রাম এই তিন গ্রামের মানুষ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ সাঁকো দিয়েই চলাচল করে। নদীর ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষ। বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এ অঞ্চলের স্কুল-কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, দিনমুজুর ও স্থানীয় জনগণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যায় জর্জরিত এ এলাকার জনসাধারণ, অসুস্থ ব্যক্তিরা এ সাঁকোর ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। কোমলমতি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে পার হয়। প্রায়ই তাদের বই, খাতা, ব্যাগ পানিতে পড়ে নষ্ট হয়। ফলে তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। বর্ষায় এ দুর্ভোগ পৌঁছে আরও চরমে।
বিজ্ঞাপন
ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের সব প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি মুজিববর্ষেই সেতু নির্মাণকাজের শুভসূচনা করা হবে। তিনি জানান, সম্প্রতি মহামারি করোনাভাইরাস না হলে এতদিনে এই সেতুর কাজটি সম্পন্ন করতে পারতাম। তবে অচিরেই এই এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আহমেদ ফিরোজ কবির, সংসদ সদস্য (পাবনা-২)
পুকুননিয়া গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলী প্রামাণিক বলেন, নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়, আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই চলাচলের জন্য একমাত্র ভরসা।
বিজ্ঞাপন
ফুলতলা গ্রামের মোছা. রাবেয়া খাতুন বলেন, সেতু না থাকায় প্রায় সারা বছরই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। এ ছাড়া গ্রামের কোনো মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে কষ্টের সীমা থাকে না। অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগী বহনের গাড়ি নেওয়া দুষ্কর।
দড়ি মালঞ্চি গ্রামের মাহতাব আলী নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, প্রতিবছর দুইপাড়ের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন আর চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুঁটি। জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। যে কারণে আমরা নিজেরাই টাকা তুলে সাঁকো নির্মাণ করি।
সাগরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য দামপ্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখানে একটা সেতু হওয়া অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি তারা শুধ আশ্বাসই দিয়ে যায়।
পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের সব প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি মুজিববর্ষেই সেতু নির্মাণকাজের শুভসূচনা করা হবে। তিনি জানান, সম্প্রতি মহামারি করোনাভাইরাস না হলে এতদিনে এই সেতুর কাজটি সম্পন্ন করতে পারতাম। তবে অচিরেই এই এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাঁশের সাঁকোর স্থলে একটি সেতু নির্মাণ হলে এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থা ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন এ এলাকার বাসিন্দারা।
এনএ