মাঝিগিরি না থাকলেও সমস্যা নেই, কিন্তু এখানে ব্রিজ প্রয়োজন
এপাশে জয়পুরহাট সদর। অন্যপাশে পাঁচবিবি উপজেলা। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। নদী পেরিয়ে আসার স্থানটির নাম মাধব ঘাট। এ ঘাট থেকে নৌকা দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করেন প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষ। এতে দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। অথচ যানবাহনযোগে জেলা শহরে যেতে পথ ঘুরতে হয় ১০ কিলোমিটার।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদের বেলআমলা গ্রাম ও পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসূলপুরের বুধইল গ্রামের মাঝামাঝিতে রয়েছে ছোট যমুনা নদী। নদী পার হওয়ার একমাত্র পথ এই মাধব ঘাট।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদ, দোগাছী এবং পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর, ধলাহার, ধরঞ্জী ইউনিয়নের প্রায় ৫০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এ ঘাট দিয়ে চলাচল করে। এ ঘাটের একমাত্র ভরসা নৌকা। তা না হলে জেলা শহরে আসতে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয় মানুষজনকে। আর এতেই বেড়ে যায় ভোগান্তি। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও এখানে ব্রিজ না হওয়ার ক্ষোভ স্থানীয়দের।
বিজ্ঞাপন
বীর মুক্তিযোদ্ধা গণেশ চন্দ্র মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই শুনছি এখানে ব্রিজ হবে। কিন্তু হচ্ছে না। রসুলপুর স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য অনেক ছেলে-মেয়ে পার হয়। এদিক দিয়ে গেলে তিন কিলোমিটার আর শিমুলতলী দিয়ে গেলে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে জয়পুরহাটে যেতে হয়। এখানে ব্রিজ হলে আমাদের অনেক ভালো হবে।
আয়মা পূর্ব রসূলপুর মসজিদে প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ইমামতি করেন আব্দুল ওয়াদুদ। মসজিদটিতে যেতে তাকে মাধব ঘাট দিয়েই যেতে হয়। তিনি বলেন, এ পথ দিয়ে যাতায়াতের খুবই সমস্যা। অনেক মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যদি এখানে ব্রিজ হয় তাহলে আমাদের আর এ ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
রাসমনি নামের এক নারী বলেন, এ ঘাটের ওপর আমার বাড়ি। নদীর ওপার যেতে আসতে খুব কষ্ট হয়। আমরা এখানে খুব বিপদে আছি। আমার দাদা-দাদি, বাপ-দাদারা সবাই চলে গেল। তারাও বলতো এখানে ব্রিজ হবে। হচ্ছে হচ্ছে করে হয় না।
মাধব ঘাটে অনেক মাঝিই নৌকা দিয়ে এপার থেকে ওপারে যাত্রী পারাপার করেছেন। বাঙ্গোয়া নামের এক পশ্চিমা, তারপরে মজি, গণি, কুশা, নব, গৌড়, মঞ্জিলা নামের অনেক মাঝির মতো এখন এ ঘাটে যাত্রী পারাপার করেন মাঝি বিজয় মন্ডল। তিনি বলেন, মাঝিগিরি না থাকলেও সমস্যা নেই, কিন্তু এখানে ব্রিজ প্রয়োজন।
বিজয় মন্ডল বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে শুনছি এখানে ব্রিজ হবে। কিন্তু হয় না। অনেক লোকজন এসে মাপযোগ নেয়, আবার চলে যায়। ছোটবেলা থেকে এখন আমার বয়স ৫০ পার হয়ে গেছে। এ ঘাটে নৌকা চালানোর বয়স প্রায় ২৫ বছর। এ পথ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের যেতে অনেক অসুবিধা হয়। অনেক গ্রামের লোকের অসুবিধা হয়।
শিক্ষার্থী পার্থ, সুরভীসহ কয়েকজন জানায়, নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। বর্ষা এলে সমস্যা বেড়ে যায়। আমরা এখানে একটি ব্রিজ চাই।
স্থানীয় আলম হোসেন ও কৃষ্ণচন্দ্রসহ অনেকেই বলেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বর্ষাকাল এলে নদীতে পানি বেড়ে যায়। তখন নদী পারাপার হওয়া যায় না। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না।
মোহাম্মদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে, অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে ব্যাপক সমস্যা হয়। নদী পারাপার হতে না পেরে অনেককে পাঁচবিবির শিমুলতলী এলাকা দিয়ে ঘুরে জেলা শহরে যেতে হয়। এলজিইডি ডিপার্টমেন্ট মাপ-যোগ করেছে। এখন ব্রিজ হলেই হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাধবঘাটে ব্রিজের জন্য টেন্ডার হবে বলে আশা করছেন আয়মারসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল আলম।
মাধব ঘাটে একটি ব্রিজ অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলাউদ্দিন হোসেন বলেন, নদীর দু’পারের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজ নির্মাণের জন্য দাবি করে আসছে। মোহাম্মদাবাদের লোকজন ওইপারে যেতে হলে এবং ওইপারের লোকজন এপারে আসতে হলে এখানে একটি ব্রিজ জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করা দরকার। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এলজিইডি একাত্ততা পোষণ করছে এবং আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও এ ব্যাপারে সচেষ্ট আছেন। আমি এখানকার সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে মাধবঘাটে জরুরি ভিত্তিতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করব।
এমএএস