‘একটা ঠিকানা চাই,
যেই ঠিকানায় সপ্তাহশেষে একটি করে চিঠি দিব…
প্রেম-প্রেম, আবেগে ঠাসা, ভালোবাসায় টইটুম্বুর’

আশির দশকে ভালোবাসার তীব্রতাকে প্রতিবাদে রূপ দিয়ে কোটি বাঙালির হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা দখল করে রেখেছেন ক্ষণজন্মা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বাংলা সাহিত্যের দ্রোহ ও প্রেমের কবি, স্বপ্ন ও সংগ্রামের কবি। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের একজন সফল গীতিকারও।

তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক সেই কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আজ ৬৫তম জন্মদিন। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তার বাবার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তবে কবির মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। তার বাবার নাম ডা. শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম।

অকালপ্রয়াত এই কবির জন্মদিন উপলক্ষে তার গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন আয়োজন করেছে রুদ্র স্মৃতি সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ভাই ও রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি সুমেল সারাফাত জানান, কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে রুদ্র স্মৃতি সংসদ মোংলার মিঠাখালিতে শোভাযাত্রা, কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া অনুষ্ঠান করেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যায় মোংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে রুদ্র স্মৃতি সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মোংলা শাখা স্মরণসভার আয়োজন করেছে। স্মরণসভা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি ও রুদ্রের গান পরিবেশিত হবে বলে জানান তিনি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রুদ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন। ছাত্র থাকা অবস্থায় সক্রিয়ভাবে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশের বেশির ভাগ আন্দোলনে কবি রুদ্রর অংশগ্রহণ ছিল। ধারণা করা হয়, এসব থেকেই হয়তো তিনি বেশ কয়েকটি বিদ্রোহের কাব্য রচনা করেন। তার লেখা গান, কবিতা শুধু বাংলাদেশে নয়, ওপার বাংলাতেও বেশ জনপ্রিয়।

মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) ক্ষণস্থায়ী জীবনে তিনি ৭টি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুর করেছেন।

১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘উপদ্রুত উপকূলে’। প্রথম বইয়ের ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতা পাঠক সমাজে সাড়া ফেলে। রুদ্রর দ্বিতীয় বই ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তারপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘মানুষের মানচিত্র‘ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৬), ‘গল্প’ (১৯৮৭), ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) ও ‘মৌলিক মুখোশ’ (১৯৯০)। এ ছাড়া প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ ‘সোনালি শিশির’। আর তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’।

‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। ‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য সংস্কৃতি সংসদ থেকে পরপর দুই বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন এই ক্ষণজন্মা কবি।

তানজীম আহমেদ/এনএ