বিদেশফেরত মহসিনের মুখে হাসি ফুটেছে
বিদেশফেরত মহসিনের মুখে ফুটে উঠছে সম্ভাবনার হাসি
মৌমাছি উড়ে বেড়াচ্ছে ফুলের এক পাপড়ি থেকে অন্য পাপড়িতে। এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। ঘটছে পরাগায়ন। ফুল থেকে সংগ্রহ করছে মধু, সেই মধু নিয়ে জমা রাখছে খেতের পাশেই রাখা সারি সারি বাক্সে। একটু দূরেই খেতের আলে দাঁড়িয়ে থাকা বিদেশফেরত মহসিনের মুখে ফুটে উঠছে সম্ভাবনার হাসি।
মহামারি করোনাভাইরাসে লকডাউনের আগেই চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে ফেরেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আশারামপুর গ্রামের মালেশিয়াপ্রবাসী মহসিন। একদিকে চাকরি হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে করোনার থাবা। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়া মহসিন এখন স্বপ্ন দেখছেন সরিষা ফুলের মধু চাষ নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর নরসিংদীর ছয়টি উপজেলায় পাঁচ হাজার ছয় হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। সরিষা ফুলে মধুচাষ ইতিবাচক বলে মনে করছে তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা ফুলে মৌচাষে পরাগায়ন বেশি হয়। ফলে সরিষা উৎপাদন বাড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
মহসিন বলেন, ২০০৯ সালে এসএসসি পাসের পর আর পড়াশোনা হয়নি। বাবা, মা, বড় বোনের মেয়ে। এই আমাদের সংসার। বাবা কৃষিকাজ করতেন, আমিও সহযোগিতা করতাম। পাঁচ-ছয় বছরে দেশে কোনো চাকরির সুবিধা করতে না পেরে ২০১৭ সালের মে মাসে ধার ও বিপুল সুদের বিনিময়ে ঋণ নিয়ে মালেশিয়ায় প্রবাসজীবন শুরু করি। এত দিন মোটামুটি চলে গেলেও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানি চাকরি থেকে বাদ দেয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, তারপর তিন বছরের প্রবাসজীবনের ইতি টেনে স্বর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরে আসি। এখানে এসেও লকডাউন, করোনা, নতুন চাকরির সুযোগ না থাকা বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় আবারও। একদিকে পরিবারের ভরণপোষণ, অন্যদিকে ধারদেনা। ঠিক এই মুহূর্তে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পাই নরসিংদী সদরের চান্দের পাড়া এলাকায় গত বছর কয়েকজন কৃষক মধু চাষে বেশ লাভবান হয়েছেন। আমি তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে, জেলা কৃষি অফিস থেকে বাক্স বসানো, পরাগায়নের সময়, মধু কাটার সঠিক নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা নিয়ে নিজেই প্রায় ৪০টির মতো বাক্স বসাই।
১৫ দিন পরপর মধু সংগ্রহ করতে হয়। এই পর্যন্ত দুই চালানে ৫০০ টাকা কেজি দরে দেড় শ কেজি বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি বাক্সে খরচ পড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সামনের সপ্তাহে আরেক চালান পাওয়ার পর জায়গা পরিবর্তন করে দিলে আরও এক চালান পাওয়া সম্ভব। এতে পুঁজি ওঠার পাশাপাশি লাভের মুখ দেখা যাবে।
মধু উৎপাদনে কোনো সমস্যা আছে কি না, এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে মহসিন বলেন, আমাদের দেশে মধু ব্যবসা এখনো পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়নি। ফলে বাজারজাতকরণে সমস্যা দেখা দেয়। যদি সহজ বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা যায়, তবে আরও বিস্তর পরিসরে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শোভন কুমার ধর বলেন, যেই ফুলে মৌমাছি নেই, সেই ফুলে সরিষার দানা পুষ্ট হয় না। সেখানে ফলনও কম হয়। তা ছাড়া এই মধু চাষে ফলন বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই প্রযুক্তি অনেক আগে শুরু হলেও ইদানীং নরসিংদীর বিভিন্ন চরে এই মধু চাষ করা হচ্ছে।
উপপরিচালক আরও বলেন, এ বছর নরসিংদী থেকে প্রায় এক হাজার কেজির বেশি সরিষা ফুলের মধু পাওয়ার আশা রাখছি। আমরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আশা করি নরসিংদীসহ সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করা গেলে এই মধু দেশের বাইরেও রপ্তানি করা সম্ভব। বাজারজাতকরণ সমস্যাসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা অচিরেই সমাধান হবে।
এনএ