কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজশাহী
ঘন কুয়াশায় বাতি জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন
ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজশাহী অঞ্চল। পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মত শিশির। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক যুগেও এমন শিশির তারা দেখেননি। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, রাত ৯টার পর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে চারপাশ। সেই সঙ্গে শুরু হয় শিশির। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ইলশেগুঁড়িতে রূপ নিয়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তায় কমেছে লোকজন। আগেভাগেই বন্ধ হয়ে গেছে নগরীর দোকানগুলো। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যাচ্ছেননা। মহাসড়কে তুলনামূলক ধীরে চলছে পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার বাস।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে নগর ভবনের সামনের ফুটপাতে বসে বিরাম নিচ্ছিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী জয়গুন নেসা। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো আজও তিনি রাতে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে ধোঁয়ার মতো কুণ্ডলি পাকিয়ে কুয়াশা পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে চারদিক ঢাকা পড়ে কুয়াশায়। তীব্র শীত ও কুয়াশায় তাদের কষ্ট করে কাজ করতে হচ্ছে।
পাশেই দায়িত্ব পালন করছেন নৈশ প্রহরী আবদুল হাই। তিনি জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নগরীতে নাইটগার্ডের কাজ করছেন। কিন্তু এর আগে কখনোই এমন কুয়াশা পড়তে দেখেননি। তবে এর চেয়ে আগে অনেক বেশি ঠান্ডা তিনি পড়তে দেখেছেন।
বিজ্ঞাপন
কুয়াশার চাদর ভেদ করে গন্তব্যে যাত্রী পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন রিকশাচালক আবদুল হাই। তিনি জানান, আট বছরের এই পেশায় আগে এমন কুয়াশা পড়তে তিনিও দেখেননি। কুয়াশার কারণে রাস্তায় লোকজন নেই। খালি রিকশা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছেন। রাস্তায় চলতে হচ্ছে সাবধানে। শিশিরে পুরো শরীর ভিজে গেছে। চোখের পাতায় জমে গেছে শিশিরবিন্দু।
ঘন কুয়াশা ও শিশিরপাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক এএসএম গাউসুজ্জজামান। তিনি বলেন, রাত ৯টার পর থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েছে। এই কারণে কমেছে দৃষ্টিসীমা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে শিশিরপাতও হচ্ছে।
তিনি বলেন, শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় দৃষ্টিসীমা ছিল ২০০ মিটার। বেলা ৯টা পর্যন্ত একই দৃষ্টিসীমা ছিল। রাত ৯টার দিকে দৃষ্টিসীমা ছিল ৪ কিলোমিটার। এরপর থেকেই চারপাশ কূয়াশায় ঢেকে যায়। একেবারেই কমে যায় দৃষ্টিসীমা।
শনিবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টা ও ৯টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বিকেল ৩টার দিকে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে, গত ১৪ জানুয়ারি মাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকেই উঠানামা করছে তাপমাত্রার পারদ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, আজকের (শনিবার) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা ছিল সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহীতে ঘন কুয়াশা পড়বে। মূলত রাতেই পড়বে ঘন কুয়াশা। মাটির আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় কুয়াশার পরিমাণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচদিন এই কুয়াশা থাকবে। একদিন বেশি পড়লে পরদিন কম কুয়াশা পড়বে। জানুয়ারির শেষের এই কদিন এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধজুড়ে থাকবে কুয়াশা ও শীত। এরপর দিনের তাপমাত্রা বাড়বে।
এসপি