যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন নোয়াখালীর সালাহ উদ্দিন
যুক্তরাষ্ট্রে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। ভাগ্য বদলের আশায় পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সেই হাসি বাড়ি ফিরল কান্না হয়ে।
নিহত সালাহ উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ফুড ডেলিভারি পেশায় যুক্ত ছিলেন। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নের হাঁটগাঁও গ্রামের ফাজিল মিয়ার ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক। দুই বছর আগে ভাগ্য বদলের আশায় সালাহ উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, শনিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৯টায় জানাজা শেষে সালাহ উদ্দিনের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহতের বাবা-মা, স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজন আহাজারি করছেন। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এর আগে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নিয়ে রওনা হন তার শ্যালক মো. সবুজ আহসান।
সবুজ আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বোনের জামাই বলে নয়, উনি খুব মিশুক ও হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। খুব দ্রুত মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন। সংসারের একমাত্র উপর্জনকারী ছিলেন উনি। দুই সন্তান আর স্ত্রী রেখে গেছেন। উনাকে শেষ বিদায় দেওয়া খুবই কষ্টের বিষয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ব্যস্ততম ম্যানহাটন ডাউনটাউনের ক্রিস্টি ও হেস্টারে অবস্থিত পার্কের কাছে ফুড ডেলিভারি দিতে গিয়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সালাহ উদ্দিন। স্থানীয় পুলিশ দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বেলভিউ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিউইয়র্ক বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার মৃত্যুর খবরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ব্রুকলিনের কোর্টেলইউ রোডের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা তার মরদেহ এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে পাঠিয়েছি।
নিহত সালাহ উদ্দিনের শ্যালক আহসান সুমন বলেন, জমি বিক্রি করে বছর দুয়েক আগে দালালকে ২৫ লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান সালাহ উদ্দিন। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়ে তার করা আবেদন অভিবাসন আদালতে বিবেচনাধীন ছিল।
তিনি আরও বলেন, নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে ‘গ্রুবহাব’ অ্যাপের মাধ্যমে খাবার ডেলিভারির কাজ করতেন সালাহ উদ্দিন। সেজন্য ছয় মাস আগে ধার করে ইলেকট্রিক বাইক কিনেছিলেন। ফুড ডেলিভারির সময় ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করে বাবলুর কাছ থেকে বাইক, মোবাইলসহ সব কেড়ে নেয়।
নিউইয়র্কের বাসিন্দা রুদ্র মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সালাহ উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে পুলিশ। তারা বলেছে, ওই পার্কের একটি ব্রেঞ্চে বিশ্রাম নেওয়ার সময় সালাহ উদ্দিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। একই ব্রেঞ্চে বসে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ এক যুবক সালাহ উদ্দিনের ইলেকট্রিক বাইক নিয়ে পালাতে চাইলে তিনি বাধা দেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে বাইকটি নিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারী। খবর পেয়ে টহল পুলিশের একটি দল সালাহ উদ্দিনকে বেলভিউ হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান তিনি মারা গেছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সালাহ উদ্দিনের মরদেহ সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নে পৌঁছালে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার জানাজায় অংসখ্য মানুষ হয়েছিল। কখনো কারও সঙ্গে কথা-কাটাকাটি করতেন না তিনি। পুরো এলাকায় যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর