নিহত কাশেম আলীর স্ত্রী নুরজাহান বেগম ও স্বজনরা

লক্ষ্মীপুরে ইটভাটা শ্রমিক কাশেম আলীকে (২৮) হত্যার ঘটনায় আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার পর সদর থানা পুলিশের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সদর) বিচারক তারেক আজিজ এ নির্দেশ দেন। বাদীর আইনজীবী লুৎফুর রহমান গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত কাশেম আলীর স্ত্রী নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত চারজনের নামে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

বাদীর আইনজীবী লুৎফুর রহমান গাজী বলেন, কাশেম আলী হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি আদালতের বিচারক তারেক আজিজ আমলে নিয়েছেন। হত্যার ঘটনায় সদর থানা পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপসহ আগামী পাঁচদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। প্রতিবেদন অনুযায়ী আদালত পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।

মামলার আসামিরা হলেন- সদর উপজেলা তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের আন্ধারমানিক এলাকার জসিম ব্রিক ফিল্ডের মাঝি মো. সবুজ, তার ভাই মো. মঞ্জু, মো. স্বপন, একই এলাকার ইব্রাহিম ও অজ্ঞাত চারজন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ইটভাটার মাঝি সবুজ এক লাখ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কাশেমকে কাজে নিয়োগ দেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কাজে যোগদানের আগে সব টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সবুজ তা দেননি  কাশেমকে তিনি ৯৪ হাজার টাকা দেন। বাকি ২১ হাজার টাকার জন্য কাশেম একাধিকবার সবুজকে বলেন। 

কিন্তু সবুজ কর্ণপাত করেননি। এ নিয়ে ১৪ জানুয়ারি কাশেম টাকার জন্য সবুজের বিরুদ্ধে সালিসি বৈঠক বসানোর হুঁশিয়ারি দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে সবুজ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এতে কাশেমও ক্ষিপ্ত হন। পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সবুজ অন্যান্য আসামিদের নিয়ে ইটভাটায় কাশেমের ওপর হামলা চালান। 

আশপাশের লোকজন এসে কাশেমকে উদ্ধার করেন। উপস্থিত সবার সামনে কাশেমকে হত্যার হুঁশিয়ারি দেন সবুজ। বিষয়টি কাশেম তার স্ত্রী মামলার বাদী নুরজাহানকে জানান।

১৫ জানুয়ারি সকালে কাশেম ইটভাটায় কাজের উদ্দেশ্যে চলে যান। ১৮ জানুয়ারি সকালে কাশেম বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হন। পথিমধ্যে আবদুর রহিমের দোকানে চা খেয়ে বাড়ি ফেরার পথেই আসামিরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। হত্যার পর মাফলার গলায় পেঁচিয়ে গাছের একটি ভাঙা ডালের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন আসামিরা। কাশেমের মরদেহ হাঁটুভাঙা অবস্থায় মাটিতে লেগেছিল। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।

বাদী নুরজাহান বেগম বলেন, কাশেমকে পরিকল্পিতভাবে সবুজ মাঝিসহ আসামিরা হত্যা করেছেন। ঘটনাটিকে অন্যদিকে নিতে আসামিরা পুলিশকে ফোন দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সাজিয়েছেন। আসামি স্বপন আমাকে থানায় নিয়ে সাদা কাগজে সই নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করিয়েছেন। এজন্য স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে সবুজসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

এদিকে, ঘটনার দিন পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে ইটভাটার মাঝি মো. সবুজ নিজেকে কাশেমের চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে বক্তব্য দেন। তখন তিনি বলেন, ইটভাটা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে কে বা কারা কাশেমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছেন। যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানান সবুজ।

এএম