সাঁইজির গান শুনে মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতারা
একদিকে ঢুলি বাদ্যের তালে তালে নাচ। অন্যদিকে একতারাওয়ালার নাচ। থেমে নেই বাঁশিওয়ালাও। সুরে সুরে মাতিয়ে তুলছেন পুরো আসর। আরেকদিকে লালন সাঁইয়ের ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, আমরা ভেবে করব কী’ শিরোনামের গান গাইছেন শিল্পী হাসেম চিশতী। দেহতত্ত্বের এ গান শুনে চাতক পানে বসে থাকা নিস্তব্ধ গ্যালারি ভর্তি দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে গেলেন।
হাসেম চিশতীর কণ্ঠে পরের লাইন, ‘ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম, তাকে তোমরা বলো কী। ছয় মাসের এক কন্যা ছিল, নয় মাসে তার গর্ভ হল, এগার মাসে তিনটি সন্তান, কোনটা করবে ফকিরি?........’ গান শেষ হতেই করতালি দিয়ে শিল্পীকে সাধুবাদ জানালেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা।
বিজ্ঞাপন
এমনই অসংখ্য গান নিয়ে আসর বসেছিল জয়পুরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। এ আসরে সোমবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিল্পীরা শোনান শেকড়ের গান। গানের শুরুতেই হাসেম চিশতী বলেন, সংগীত মানুষের আত্মার খোরাক। বাজার করেছি, ক্ষুধা নিবারণ করেছি, কিন্তু আমার আত্মার ক্ষুধা নিবারণ হয় নাই। তাই তো আপনারা বসে আছেন চাতক পানে। সুর দিয়ে কি হয়? সুর দিয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামানো সম্ভব, সুর দিয়ে সনাতন ধর্মে বলে অসুরকে বধ করা যায়, সুর দিয়ে প্রভুর মন কেড়ে নেওয়া যায়।
ফরহাদ সরকার নামের এক দর্শক বলেন, অনুষ্ঠানটি অনেক সুন্দর এবং আয়োজনও ছিল অনেক ভালো। এ ধরনের অনুষ্ঠান বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন। আমরা গানের মাধ্যমে সাঁইজির বাণীসহ লোক হারিয়ে যাওয়া গানগুলো নতুন করে শুনতে পেরেছি। শিল্পীরা অসাধারণ পরিবেশন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
সুষ্মিতা নামের আরেক দর্শক বলেন, এখন আমারা যে সামাজিক প্রেক্ষাপটে আছি। সেখান থেকে আমাদের এরকম অনুষ্ঠানের আসলেই প্রয়োজন। আর এ মহামারিতেও আমরা এরকম একটি অনুষ্ঠান দেখতে পারছি। তাতে অনেক ভালো লাগছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পীদের গানে মুগ্ধ হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, গানের মাধ্যমে শিল্পীরা কত সুন্দর সুন্দর বাণী প্রচার করছেন। এটা আমাদের বেশি বেশি করতে হবে। কারণ নতুন প্রজন্ম এ গানগুলো শোনেনি। আবার অনেকেই শোনে কিন্তু ভেতরে নেয় না বা অনুধাবন করতে পারে না যে এটার আসল অর্থটা কি? আমরা শিল্পীদের উৎসাহ দিতে চাই। ধর্মান্ধতাকে শুধু আইন-কানুন নীতিমালা দিয়ে হবে না। আমরা সাংস্কৃতিক আনন্দ করব। এ ধর্মান্ধতা থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের অস্ত্র দিয়েই রুখে দাঁড়াব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিকতা, মূল্যবোধ মানুষই সবকিছু। মানুষ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এ লোক সংগীতের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আরও বিকশিত হবে। আমরা মানুষ হিসেবে বড় পরিচয়। সে মানবিক মূল্যবোধগুলো জাগ্রত করব। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এ লোক সংগীতের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমিন আহম্মেদ চৌধুরী জিপি, প্রবীণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাজা চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল হক আনু প্রমুখ।
চম্পক কুমার/এসএসএইচ