টাঙ্গাইলের মধুপুরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের সামনে ধান চাষ করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এতে ঘর থেকে বের হতে পারছে না সুবিধাভোগী এক পরিবার। 

এদিকে উপহারের ঘরে ফাটল ধরার পাশাপাশি ঘরের ভেতর বৃষ্টির পানি পড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘর ভেঙে পড়ে আশঙ্কা করছেন সুবিধাভোগীরা। 

সরেজমিনে উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কেওটাই এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীন প্রধানমন্ত্রী দেওয়া উপহারের ঘরের দেয়াল, মেঝেসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। এখানে আটটি হতদরিদ্র পরিবার বসবাস করছে। এদের কেউ দিনমুজুর, কেউ ভ্যান চালায়। সহায় সম্বলহীন এসব মানুষ পাকা ঘর পেয়ে আনন্দিত হলেও বছর না যেতেই তা বিষাদে রূপ নিয়েছে। 

জানা গেছে, মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কেওটাই গ্রামে সরকারি জায়গায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য আটটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘর নির্মাণ শেষ হলে জায়গাসহ তা ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, সেখানে বসবাসকারীরা সরকারি সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে নির্মাণ হয়নি রাস্তা। দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে অন্ধকারে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সেখানকার বসবাসকারীরা। এছাড়া সরকারি জমি দখলে থাকা স্থানীয় শামছুল হক নামে এক ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের সামনে ধান চাষ করেছেন। এতে ঘর থেকে বের হতে পারছে না একটি পরিবার।

আশ্রয়ণকেন্দ্রের বসবাসকারীরা জানান, জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি না থাকায় সরকার আমাদের থাকার জায়গাসহ ঘর করে দিয়েছে। কিন্তু এখানে বসবাস করা খুবই কষ্টকর। ঘরে যাওয়ার জন্য কোনো রাস্তা নেই। খেতের আইল ধরে ঘরে যেতে হয়। এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সরকারি কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী ভ্যানচালক মহির উদ্দিন বলেন, ভ্যান গাড়ি চালিয়ে সংসার চলে। স্থানীয় একজন তার জায়গা দাবি করে ঘরের সামনে ধান চাষ করছেন। কিছু বললেই হুমকি দেয়। এতে ঘর থেকে বের হতে পারি না। এছাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় ভ্যান অন্যের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। সরকার জায়গাসহ ভালো ঘর দিলেও এখানে বসবাস করা খুবই কঠিন।

রজব আলী বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, রাস্তা নেই। টয়লেটের জন্য পানির ট্যাংক করা হয়নি। ঘরের চারপাশে নিজেরাই মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। ফেটে গেছে ঘরের দেয়াল। মেঝেতে ফাটল ধরে ডেবে গেছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের সামনে হাঁটু সমান পানি থাকে। আবার বিদ্যুত সংযোগের জন্য টাকা চায়। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

কুড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহাম্মদ আলী বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বসবাসকারীদের কাছ থেকে ছবি ও আইডি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা না দেওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। এছাড়া ঘরের কাজগুলো দ্রুত করায় এবং নতুন মাটির ওপর ঘর নির্মাণ করায় ফাটলের ঘটনা ঘটতে পারে। সেখানে নিম্নমানের কাজ করা হয়নি। ঘরগুলোতে যাওয়ার জন্য ৪০০ মিটার রাস্তার পরিমাপ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ পেলে হয়ত তারা কাজ শুরু করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমীন বলেন, ঘরে ফাটল ও চাষবাদের বিষয়টি আমার জানা নেই। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসপি