২২ বছর ধরে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত একরামুলের
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’, ভুপেন হাজারীকার সেই বিখ্যাত গানে ফুটে উঠেছিল মানবিক কথাগুলো। জাত-ধর্ম শ্রেণিবিভাজন করে মানুষের ভালোবাসা-মায়া-মমতা যেমন আলাদা করা যায় না, তেমনি মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিয়েও কেউ মানুষ হতে পারে না। এই সমাজে এমন কিছু দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে, যা দেখলে মানবতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
তেমনই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের একরামুল হাসান। দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ধরে বাকপ্রতিবন্ধী শ্রী বাসন্তী রানী নামের এক নারীকে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
একরামুল হাসান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ওই গ্রামে তার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র ওই হিন্দু নারীকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
শুধু আশ্রয় নয়, দায়িত্ব দিয়েছেন তার ব্যবসা দেখাশোনারও। বাসন্তী রানীকে তার সর্বজনীন হিন্দু ধর্ম যাতে যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, সে বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছেন ২২ বছর ধরে।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে একরামুল হাসান। স্ত্রী এক ছেলে এক মেয়ে নিয়েই তার সংসার। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার সুবাদে একরামুল থাকেন শহরে। তবে তিনি ভালোবাসেন সমাজ থেকে বঞ্চিত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সাহায্য করতে। শুধু তা-ই নয়, ভূমিহীন আরও একটি পরিবারকেও তার নিজের জায়গায় থাকতে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে একরামুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসন্তী রানী বাকপ্রতিবন্ধী। ২২ বছর ধরে আমার ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। তার ধর্ম তিনি পালন করেন, আমার ধর্ম আমি পালন করি। যেমন গত পূজায় আমার মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নিয়ে গেছি এবং তার ধর্ম পালনে আমি সহযোগিতা করেছি।
তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করি সব সময় নামাজ আদায় করতে। তাকেও তার ধর্ম পালনে সহযোগিতা করি। আমার স্ত্রী-সন্তান শহরে থাকে। আমি সকালে গ্রামের বাড়ির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আসার সময় বাসন্তীর জন্য আমার স্ত্রী নাশতা বানিয়ে দেন। বাসন্তী এখানে রান্না করে খান। তার রান্না করা খাবার আমি দুপুরে একসঙ্গে খাই।
তিনি আরও বলেন, এভাবে তার সঙ্গে আমার ২২ বছরের পথচলা। যত দিন বেঁচে আছি, আল্লাহ পাক যেন দুজনকে একসঙ্গে রাখেন। আমার জানামতে বাসন্তীর বাব-মা নেই। একজন ভাই আছে, সেও মানসিক ভারসাম্যহীন। তার কোনো নিকটাত্মীয় না থাকায় তিনি যদি আমার মৃত্যু আগে মৃত্যুবরণ করেন, তার ধর্মীওভাবে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা আমি করে দেব।
স্থানীয় তাইজুল ইসলাম জানান, একরামুলের বাড়িতে ২২ বছর ধরে হিন্দু ধর্মের এক বাকপ্রতিবন্ধী নারী থাকছেন। তাদের সম্পর্ক ভাইবোনের মতো। কিছুদিন আগে দুর্গাপূজায় গেলে বাসন্তী রানীকে একরামুল ভাই তার মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। মানুষের কাছে মানুষ এভাবে মূল্যায়িত হওয়া উচিত।
এনএ