মানুষের জন্য ছুটে চলা নারী উদ্যোক্তা চার্লি
নাসরীন আক্তার চার্লির পোলট্রি মুরগির খামার
পাশের বাড়ির রহিমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। একজন বলল ‘এই! হাসপাতালে নিতে হবে, তাড়াতাড়ি চার্লি আপারে ডাক্’। উত্তরে আরেকজন বলল, ‘চার্লিতো বিলকিসের মুরগি খামারে ওষুধ খাওয়াতে গ্যাছে।’ রাত তখন প্রায় ১০টা। কিন্তু তাতে কী! এলাকার মানুষের আপদে-বিপদে রাত না কি দিন— নাসরীন আক্তার চার্লির কাছে সেটি মুখ্য নয়।
শুধু মানবিক এই কর্মকাণ্ডই নয়; তিনি একজন সফল উদ্যোক্তাও। বাড়িতে পোলট্রি মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নিজে এবং গ্রামের অন্য নারীদেরও উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন তার মতো আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা হতে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের উত্তর পিপলিতা এলাকার চৌদ্দগ্রামের মেয়ে নাসরীন আক্তার চার্লি। আব্দুল হাই হাওলাদারের বড় মেয়ে চার্লি ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বিয়ে হয় এরও আগে ২০০৩ সালে। বর্তমানে তার ১২ বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে।
চার্লি তার ছোট ভাই জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ২০০ মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার করেন ২০১৮ সালে। এরপরে প্রতি চালানে ৩০০ মুরগি যুক্ত করার পাশাপাশি বর্তমানে লেয়ার মুরগিও পালন করছেন ৮০টি। কবুতর পালন করছেন ৩০টি। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যবসায় পরীক্ষামূলক ১০টি কোয়েল পাখিসহ মুরগি বিক্রিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে পন্স (জুতা) কারখানা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাড়ির সামনে জুতা ও কাপড়ের দুটি দোকান খোলারও পরিকল্পনা করছেন চার্লি।
বিজ্ঞাপন
চার্লি ২০১৩ সালে তৎকালীন কেওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঈন তালুকদারের উৎসাহে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ পরিচালিত ১১৯তম ব্যাচে ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক ট্রেনিং করেন বরিশালে। তিনি বলেনর, ‘ছোটো থেকেই আমি স্বাধীনচেতা একজন মানুষ, নিজেকে নারী মনে না করে পুরুষের মতো সব ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেছি। এখনও এলাকার মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসি।’
‘মূলত ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’র ঝালকাঠি সমন্বয়ক জাকির হোসাইনের সার্বক্ষণিক উৎসাহ ও প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণগুলো আমাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।’ বললেন তিনি।
নিজের ব্যবসা বা ভালো উদ্যোগগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান চার্লি সব সময়। নিজে সবার বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তার মতো বা অন্য কোনো কিছু করার উৎসাহ যোগান এলাকার অন্য নারীদের। মানুষের জন্য কিছু করতে চান সব সময়। পাশের মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার স্বপ্ন দেখেন সবসময়।
মানুষ তাকে ইউপি সদস্য হতে নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দিলেও তিনি বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্য হলে যা করতে পারব, মানুষের জন্য তার চেয়ে এখন বেশি করতে পারছি, আমার নির্বাচন করার দরকার নেই।’
ইসমাঈল হোসাঈন/এমএসআর