শ্বশুরের আগুনে জামাইয়ের ঘর পুড়ে ছাই!
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে রাতের অন্ধকারে মো. মমিন নামে এক রিকশা চালকের ঘর আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরের বিরুদ্ধে। শ্বশুর বাসু মাঝির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছে মমিনের বাবা আবদুল মতিন। যেকোন সময় তার পরিবারের আরও বড় ক্ষতি করার আশঙ্কাও করেন তিনি।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে জীবনের নিরাপত্তা ও ঘর পোড়ানোর বিচার চেয়ে গণমাধ্যমের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন। আবদুল মতিনের দাবি, পুড়ে যাওয়া ঘরটি ছাড়া মতিনের থাকার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে পরিবার নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। এছাড়া অভিযুক্তদের হুমকিতে তিনি পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের কাছে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী আবদুল মতিন রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা। ছেলে মো. মমিনসহ তিনি ফেনীর দাগনভূঁইয়া এলাকায় রিকশা চালান।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ছেলে মমিনের সঙ্গে তার স্ত্রী শিল্পি বেগমের কলহ রয়েছে। এনিয়ে মমিন তার স্ত্রীকে থাপ্পড় দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭ নভেম্বর শিল্পিসহ তার বাবা বাসু মাঝি, মা হোসনেয়ারা বেগম, আত্মীয় শাহিনুর আক্তার, আবদুর রহিম ও জসিম উদ্দিন বাড়িতে এসে মমিনকে পিটিয়ে আহত করে। মমিন চিকিৎসা না নিয়েই ঘটনার দিন দাগনভূঁইয়া চলে যান। সেখানে সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। পরদিন আবদুল মতিন বাড়িতে এসে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামগতি আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি দাগনভূঁইয়া চলে যান।
বিজ্ঞাপন
মামলার বিষয়ে জানতে পেরে ২৪ নভেম্বর বাসু মাঝিসহ অভিযুক্তরা রাতের অন্ধকারে আবদুল মতিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে তিন কক্ষের টিনের ঘরটি পুড়ে যায়। ছাই হয়ে যায় ঘরের আসবাবপত্র। পুড়েছে ঘরের বাইরে চালার সঙ্গে ঝুলানো কাঠের খোপে থাকা ৪০টি কবুতর। তবে ঘরে কেউ না থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে মতিন রামগতি থানায় বসু মাঝিসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন করেন।
প্রতিবেশি মাজহারুল ইসলাম বলেন, আগুন নেভাতে গিয়েও সম্ভব হয়নি। অসহায় মানুষটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে৷ আগুন জ্বলতে দেখলেও তখন কাউকে দেখেননি।
আবদুল মতিনের স্ত্রী আক্তারা বেগম বলেন, বাসু মাঝির লোকজন আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এতে ভয়ে ওই রাতে আমি ঘরে ঘুমাইনি। প্রতিবেশিদের ঘরে ঘুমিয়েছে। হঠাৎ ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। কিছুক্ষণ পরই দাউ দাউ করতে আগুন জ্বলতে শুরু করে। পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার আগেই সব পুড়ে যায়।
আবদুল মতিন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার একমাত্র শত্রু বেয়াই বাসু মাঝি। দুই বছর আগে আমি এ গ্রামে এসে তার কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি কিনি। এর কিছু অংশে টিনের ঘর করে বসবাস করছি। বাকি অংশ এখনো আমাকে বুঝিয়ে দেননি। এখানে আসার পর তার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দিই। ছেলে তার স্ত্রীকে একটি থাপ্পড় দেয়। এতে তারা আমার ছেলেকে মেরে গুরুতর আহত করে। এনিয়ে মামলা করায় তারা আমার ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাসু মাঝি বলেন, আগুন লাগানোর ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। শত্রুতা করে অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
মতিনের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুজন বলেন, মমিনকে মারধরের ঘটনার অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রামগতি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বলেন, আগুনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাইনি। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মারধরের অভিযোগটিও তদন্তাধীন রয়েছে।
শাকিল /এসএম