সিলেটে আবারও আলোচনায় রায়হান হত্যাকাণ্ড
রায়হান
সিলেটের বহুল আলোচিত রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। রোববার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশ হেফাজতে মৃত রায়হানের মামলার বিষয়টি নগরের মানুষের মধ্যে ছিলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
আলোচনার মূল বিষয় ছিলো রায়হান হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারে সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত হওয়া নিয়ে। নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম গতকাল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী আত্মহত্যা করলো অথচ আমরা কেউই জানলাম না।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তিনি বলেন, আমি সঠিক জানি না- সে আত্মহত্যা করেছে কি না বা কীভাবে মারা গেছে। পুলিশও আমাকে জানালো না কিছু।
খুনের ঘটনার আরেক সাক্ষীকে কারাগারে থাকা আসামিপক্ষের লোকজনের দ্বারাও এখন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই বিচার নিয়ে আসামিপক্ষের হুমকি-ধামকি নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুলাই লালের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। ১ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে চুলাই লালের মরদেহ গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে দেখতে পান তার পরিবারের সদস্যরা।
বিজ্ঞাপন
পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার চুলাই লালকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি।
চুলাই লালের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বোন প্রতিমা রাণী বলেন, চুলাই লাল বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে মদ পান করতেন। ১ ডিসেম্বর সকালে অনেক্ষণ দরজায় ডাকাডাকি করে চুলাই লালের সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে দরজা ভেঙে তার মরদেহ ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখতে পান তারা।
পরে দেহটি নামিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে হয়তো হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে চুলাই লাল আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন প্রতিমা রাণী।
এদিকে এ মামলার পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের ক্রোকি পরোয়ানা তামিল না হওয়ায় রোববার (৫ ডিসেম্বর) নির্ধারিত দিনে মামলার শুনানি হয়নি। অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএম) আদালতে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য মামলার আসামিদেরও আদালতে হাজির করা হয়।
রায়হানের আইনজীবী ব্যারিস্টার এমএ ফজল চৌধুরী জানান, রায়হান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান ঘটনার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পলাতক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ও মালামাল ক্রোকি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ক্রোকি পরোয়ানা তামিল না হওয়ায় আদালত পুনরায় আরেকটি তারিখ ধার্য করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে সে বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। চলতি বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ।
অভিযুক্ত অপরজন পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এমএসআর