‘গেছে বৈন্নয়ায় (বন্যা) সিডরের কালে সাগরের নামাদিয়া দমার বাড়ির লগে ট্রলার কাইত কইরা লাইছে। হেইকালে দুইডা ছোড ছোড বাঁশ ধইরা আল্লাহ আল্লাহ করছি, এই বুঝু হাত ছুইটা গেল। হাতের ধারে কিচ্ছু পাই নাই। ট্রলারের হগলে (সবাই) যে যার মতো দোড়াইতাছে, কেউ কেউ পানিত ঝাঁপদিছে। হেইয়া মনে ওঠলে আইজও কান্দন আহে। স্যারেরা আইজ একটা ট্রলারের লইগা দুইডা কইরা বয়া আর পাঁচটা কইরা লাইফ জ্যাকেট দিছে, এহন গাঙে আর সাগরে ভয় নাই।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভোলা সদর উপজেলার ৪ নম্বর কাচিয়া ইউনিয়ন কাঠির মাথা মাছঘাট এলাকার মোতালেব মাঝি। তার মতো ৭০ জন জেলের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ‘লজিক’। 

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ইউনিয়নের ৭০ জন জেলেকে লাইফ জ্যাকেট প্রদান করা হয়। 

কাচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম নকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক রাজিব আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, স্থানীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সদর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতীক দে, লজিক প্রকল্পের ভোলা ডিস্ট্রিক্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ কো-অর্ডিনেটর নুরুল মোমেন সিদ্দিকী রায়হান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লজিক প্রকল্পের ভোলা ডিস্ট্রিক্ট ক্লাইমেট ফিন্যান্সের জেলা কো-অর্ডিনেটর হেলাল উদ্দিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজিব আহমেদ বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জের ফলে আমরা যে ক্ষতির মুখে পড়ছি, তা থেকে বাঁচার জন্য সরকার ‘লজিক’ প্রকল্পের মাধ্যমে নানা রকমের কাজ করে আসছে। যেহেতু ভোলা জেলা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরেন এখানকার জেলেরা। সমুদ্রে যে কোনো সময় সাইক্লোন, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরে থাকা অনেক মাছ ধরার ট্রলার নিখোঁজ হয়ে যায়। তখন জেলেদের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী থাকলে তারা অন্তত জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকায় লজিকের মাধ্যমে জেলেদের সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে একটি ট্রলারে দুটি করে বয়া ও পাঁচটি করে লাইফ জ্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এসব সামগ্রী দুর্যোগের সময় জেলেদের সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করবে। 

সভাপতির বক্তব্যে কাচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম নকিব বলেন, ভোলা জেলা একটি নদী মাতৃক এলাকা। এ জেলায় কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চর রয়েছে সেখানে বসবাস করা অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঝড়ের সময় তারা নদী ও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। তাদের কথা মাথায় রেখে সরকার লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে যে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরে যে পরিমাণ মানুষ ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনযাপন করে তাদের শতকরা ১০% মানুষও এই লজিকের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। এতে করে ঝড়ের কবলে পড়ে শতভাগের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি দ্বীপ ও চরের বাসিন্দাদের শতভাগ এই লজিক প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। 

ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর