ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুণীর অস্ত্রোপচারের পর পেটে কাঁচি রেখে সেলাই করা এবং ৬৪৩ দিন পর তা বের করার ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, ওই প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য কে দায়ী, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিংবা কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়নি।

পরিচালক জানান, বিদেশি কয়েকটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে এ জাতীয় ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে অস্ত্রপচারের সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

পেটে কাঁচি রেখে সেলাই এবং ৬৪৩ দিন পর তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট থেকে বের করার ব্যাপারে গত রোববার (১২ ডিসেম্বর) গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি হলেন সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল হাসান। অপর দুই সদস্য হলেন গাইনি বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা ও সার্জারি বিভাগের মো. কামরুজ্জামান।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটি কার গাফিলতিতে পেটে কাঁচি রাখার ঘটনাটি ঘটেছে, তা শনাক্ত করতে পারেনি। পাশাপাশি ওই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত কারও ব্যাপারে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ সার্জারি ইউনিট-দুই এর দায়িত্বে নিয়োজিত সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিনের অধীনে এ অস্ত্রোপচারের সময় আরও তিন-চারজন চিকিৎসক অংশ নেন। তবে কার গাফিলতিতে এ ঘটনা ঘটেছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন জার্নলের উদ্বৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, এ জাতীয় ঘটনা অপ্রতুল নয়। এমন নয়, এটিই প্রথম ঘটেছে। এর আগেও বিভিন্ন দেশে অস্ত্রোপচারের সময় এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে।

পরিচালক সাইফুর রহমান ওই প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- অস্ত্রোপচারের সময় একজন নার্সকে যন্ত্রপাতির দায়িত্বে নির্দিষ্টভাবে নিয়োজিত করা। পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের আরও অধিক দায়িত্বশীল হওয়ায় পরামর্শও সেখানে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, মনিরা খাতুন এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে আর কত দিন ভর্তি থাকা লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, মনিরা খাতুন (১৮) গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে। তরুণীটি মেজিনট্রিক ফিস্ট (রক্তের দলা) জনিত সমস্যা নিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ২০২০ সালের মার্চে। এরপর ৩ মার্চ সার্জারি বিভাগ ইউনিট টু-তে এ সমস্যার জন্য তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকদের অজ্ঞাতসারে অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যবহৃত ছয় ইঞ্চি লম্বা অর্টারি ফরসেপ পেটের মধ্যে রেখে সেলাই করা হয়। বিষয়টি জানার পর ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর শনিবার ওই হাসপাতালেই পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তরুণীর পেট থেকে কাঁচিটি বের করা হয়।

জহির হোসেন/এনএ