কুড়িগ্রামে সিতাইঝাড় ব্রিজটি শুধু গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেনি নির্বিঘভাবে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও ভরসা পেয়েছিলেন চরবাসী। তবে ৩-৪ বছরে আগে ব্রিজটির সংযোগ সড়ক স্থাপন না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ে থাকা ব্রিজটি গ্রামবাসীর আশীর্বাদ নয়, এখন যেন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বন্যার পানিতে দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক বিছিন্ন হয়। ব্রিজ পেয়েও শুধু সংযোগ সড়কের অভাবে তিন ইউনিয়নের শত শত মানুষ চলাচল করতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের সিতাইঝাড় গ্রামের হাদের গোয়ালের বাড়ির পেছনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অর্থায়নে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই ব্রিজ।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা, পাঁচগাছি ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত হয় ১৮ ফুট দৈর্ঘের এই ব্রিজ। ব্রিজ হওয়ায় তিন ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে স্বস্তি আসে। আশে পাশে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারে যাতায়াতের সুবিধা হবে বলে ব্রিজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রতীক্ষায় থাকে লোকজন।

কিন্তু সেই আশা আর স্বপ্নে ধস নামে ১৮ বন্যায়। উদ্বোধন হওয়ার আগেই বন্যার পানির স্রোতে ব্রিজটির দু’পাড়ের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। ফলে জনসাধারণের চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয় ওঠে ব্রিজ। এতে করে এলাকাবাসী পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। উপায় না পেয়ে প্রতি বছরই পানির ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হতে হয় গ্রামবাসীর।

স্থানীয় আব্দুল লতিফ বলেন, এখান থেকে ১ কিলোমিটার দূরে কমিউনিটি ক্লিনিক, নয়ারহাট বাজার, মাদ্রাসা ও নয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। শুকনো মৌসুমে ব্রিজের নিচ দিয়ে, অন্যের ক্ষেত নষ্ট করে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষার সময় খুবই সমস্যা হয়। আশপাশে বিকল্প রাস্তা নেই। থাকলেও এখান থেকে তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। অনেক সাধনার পর ব্রিজ পেলাম কিন্তু ব্রিজটিতে এ পর্যন্ত পা রাখতে পারলাম না।

স্থানীয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাঈদুল ইসলাম বলেন, বন্যার সময় স্কুলে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় বাঁশের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পা পিছলে পানিতে পড়ে যাই। জামাকাপড়-বইখাতা ভিজে যায়। সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। সংযোগ সড়ক হলে আমাদের আর কষ্ট হত না।

সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লোকমান আলী বলেন, ব্রিজটি হওয়ার পরেই বন্যায় সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। তিন বছরে এর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। অফিসে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওরা এসে স্টিমেট করে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো টেন্ডার বা কাজের কিছুই দেখছি না।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. ফিজানুর রহমান বলেন, মোগলবাসা ইউনিয়নের সিতাইঝাড় ব্রিজটি বন্যার পানিতে সংযোগ সড়ক বিছিন্ন হয়েছিল। গত বছরে সংযোগ সড়ক সংস্কারের জন্য কাজ করা হয়। কাজ শেষ না হতেই আবারও বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ওই ব্রিজটির সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জুয়েল রানা/এমএসআর